বিখ্যাত ব্রিটিশ চিত্রশিল্পী জোসেফ ম্যালর্ড উইলিয়াম টার্নার, যিনি জে.এম.ডব্লিউ. টার্নার নামেই সুপরিচিত, তাঁর জন্মের ২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশ্বজুড়ে তাঁর শিল্পকর্ম নিয়ে চলছে আলোচনা। ১৭৭৫ সালে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী, যিনি ১৮৫১ সাল পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন, শুধু ব্রিটেনের নন, বিশ্ব শিল্পকলার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তাঁর তুলির আঁচড়ে সমুদ্রের বিশালতা, প্রকৃতির অপরূপ রূপ, আর ইতিহাসের গভীরতা যেন একসঙ্গে ধরা পড়ে।
টার্নারের জন্ম হয় লন্ডনের কাছাকাছি একটি এলাকায়। সমুদ্র আর প্রকৃতির প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ ছিল, যা তাঁর ছবিতে বারবার ফুটে উঠেছে।
তাঁর ‘কালাই পিয়ার’ (Calais Pier) ছবিতে দেখা যায় ফ্রান্সের সমুদ্র তীরে প্রথম পৌঁছানোর অনুভূতি, যেখানে উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে একটি ভঙ্গুর জেটি। এই ছবিতে সমুদ্রের ক্ষমতা আর অস্থিরতা দারুণভাবে প্রকাশিত হয়েছে।
টার্নারের ছবিতে শুধু প্রকৃতিই নয়, বরং তাঁর সময়ের প্রতিচ্ছবিও পাওয়া যায়। ফরাসি বিপ্লব থেকে শুরু করে শিল্প বিপ্লব—তাঁর সময়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা তাঁর ছবিতে প্রভাব ফেলেছে।
‘দ্য ফাইটিং টেমেরারি’ (The Fighting Temeraire) ছবিতে পুরনো একটি যুদ্ধজাহাজকে শেষ বিশ্রামের জন্য টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য, যা সময়ের পরিবর্তনের এক দারুণ প্রতীক।
টার্নারের ছবিতে ক্লাসিক্যাল আর্টের প্রভাবও দেখা যায়। তিনি প্রাচীন গ্রিক ও রোমান মিথ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছেন।
তাঁর ‘ইউলিসিস ডেরাইডিং পলিফেমাস’ (Ulysses Deriding Polyphemus) ছবিতে ওডিসি’র গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাঁর কাজে একদিকে যেমন ছিল প্রকৃতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, তেমনই ছিল ইতিহাসের প্রতি গভীর উপলব্ধি।
টার্নারের শিল্পকর্ম শুধু ব্রিটেনের নয়, বিশ্বজুড়ে আজও মানুষের মনে আলোড়ন তোলে। তাঁর ছবিতে আলো-ছায়ার খেলা, রঙের ব্যবহার, এবং গভীরতা—এসবকিছুই দর্শকদের মুগ্ধ করে।
তাঁর কাজগুলি যেন সময়ের সীমানা পেরিয়ে আজও আমাদের কাছে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।
আজকের দিনে, যখন আমরা প্রকৃতির পরিবর্তন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কথা ভাবি, তখন টার্নারের কাজ বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর ছবিতে প্রকৃতির যে বিশালতা ও ধ্বংসের চিত্র ফুটে উঠেছে, তা যেন আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সতর্ক করে।
তাঁর শিল্পকর্ম আমাদের প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে উৎসাহিত করে।
জে.এম.ডব্লিউ. টার্নার একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে আজও আমাদের মাঝে বেঁচে আছেন। তাঁর শিল্পকর্ম শুধু একটি সময়ের দলিল নয়, বরং তা আমাদের আত্মার গভীরের কথা বলে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান