মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা, বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ?
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে বেশ খানিকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেশটির বাণিজ্যনীতিতে পরিবর্তন এবং বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে এমনটা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি, বিশেষ করে বাণিজ্যখাতে এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা জরুরি।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি (GDP)-এর বৃদ্ধি কমে দাঁড়িয়েছে মাইনাস ০.৩ শতাংশে। এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে এই বৃদ্ধির হার ছিল ২.৪ শতাংশ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাধারণত এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমে যায়, যা সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে আরও দুর্বল করে তোলে। এপ্রিল মাস নাগাদ ভোক্তাদের আস্থা প্রায় ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়েছিল, যা ১৯৯০ সালের মন্দার পর সর্বনিম্ন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে কানাডা ও মেক্সিকোর মতো প্রতিবেশী দেশ এবং চীন। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ট্রাম্প প্রশাসন চীনের থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। এর জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক বসিয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ আরও তীব্র করে তুলেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট এই শুল্কনীতিকে দর কষাকষির কৌশল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তবে এর কারণে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অনেক দেশ এর বিরোধিতা করে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন, “যদি কেউ চুপ থাকে, নতি স্বীকার করে, তবে অত্যাচারী আরও বেশি সুযোগ নেবে।”
যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্যনীতি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি বড় উদ্বেগের কারণ। কারণ, এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর। বাংলাদেশের অর্থনীতিও এর বাইরে নয়। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশটি আমাদের জন্য একটি বড় বাজার। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিলে, স্বাভাবিকভাবেই আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যেও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের উচিত হবে পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা। একইসঙ্গে, বিকল্প বাজার তৈরির চেষ্টা করা এবং বাণিজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করার দিকে নজর দেওয়া। এছাড়াও, শুল্ক সংক্রান্ত জটিলতাগুলো মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার যদিও কিছু ক্ষেত্রে শুল্কের পরিমাণ কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছে এবং চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করার চেষ্টা করছে, তবে পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্থিতিশীল নয়। ফলে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য এই বিষয়টি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান