রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তি: পর্দার আড়ালে থাকা ‘অবৈধ’ এজেন্টদের গল্প।
ঠান্ডা যুদ্ধের সময়, সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং পরবর্তীকালে রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি (KGB) পশ্চিমা বিশ্বে তাদের গুপ্তচর নেটওয়ার্ক বিস্তার করে। এদের মধ্যে কিছু এজেন্ট ‘অবৈধ’ হিসেবে পরিচিত ছিল, যাদের কাজ ছিল ছদ্মবেশ ধারণ করে সাধারণ মানুষের মতো জীবন যাপন করা এবং নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রেখে তথ্য সংগ্রহ করা।
সম্প্রতি, শোন ওয়াকারের লেখা ‘দ্য ইলিগ্যালস’ (The Illegals) বইটিতে এই ‘অবৈধ’ এজেন্টদের জীবনযাত্রা এবং তাদের গুপ্তচরবৃত্তির নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে।
বইটিতে অবৈধ এজেন্টদের প্রশিক্ষণ, কৌশল এবং তাদের মানসিক চাপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আন্দ্রে বেজরুকভ এবং এলেনা ভাবিলোভা। তারা ডন হিথফিল্ড এবং অ্যান ফলি ছদ্মনাম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামব্রিজে বসবাস করতেন।
কিন্তু ২০১০ সালের জুন মাসে তাদের আসল পরিচয় ফাঁস হয়ে যায় এবং এফবিআই তাদের গ্রেপ্তার করে। তাদের দুই ছেলে, টিম এবং অ্যালেক্স-এর জীবনও এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ বদলে যায়।
তাদের কানাডার নাগরিকত্ব বাতিল করে মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয় এবং অ্যালেক্সকে এমন একটি রাশিয়ান পাসপোর্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়, যে নামটি সে ভালোভাবে উচ্চারণ করতে পারতো না।
ওয়াকারের বইটিতে অবৈধ এজেন্টদের প্রশিক্ষণের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। কীভাবে তারা যোগাযোগের জন্য সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করত, যেমন – সাদা চক দিয়ে ল্যাম্পপোস্টে চিহ্ন দেওয়া হলে বোঝানো হতো তারা তথ্য আদান-প্রদানের জন্য প্রস্তুত, নীল চিহ্ন থাকলে বুঝতে হতো তাদের হ্যান্ডলার তথ্য নেওয়ার জন্য প্রস্তুত।
বইটিতে আরও বলা হয়েছে, এই এজেন্টদের অনেক সময় দীর্ঘদিন ধরে একাকী জীবন কাটাতে হতো, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হতো এবং নিজেদের আসল পরিচয় গোপন রাখতে হতো।
সোভিয়েত আমলে, অবৈধ এজেন্টদের ধারণা আসে। তারা মূলত পশ্চিমা বিশ্বে নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে তথ্য সংগ্রহ করত।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, এই এজেন্টরা জার্মান কর্মকর্তাদের হত্যাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বইটিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, কীভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন অবৈধ এজেন্টদের কর্মকাণ্ডকে পুনরায় মূল্যায়ন করেছেন এবং তাদের ‘দৃঢ় নৈতিকতা’ ও ‘চরিত্রের দৃঢ়তা’র প্রশংসা করেছেন।
তবে, ওয়াকারের মতে, এই এজেন্টদের কাছ থেকে সংগৃহীত তথ্যের কার্যকারিতা সব সময় উল্লেখযোগ্য ছিল না।
ওয়াকারের এই বইটি রাশিয়ার গুপ্তচরবৃত্তি, ঠান্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং এর সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর জীবন সম্পর্কে একটি গভীর ধারণা দেয়। বইটির মাধ্যমে পাঠকরা জানতে পারে, কীভাবে কিছু মানুষ নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে একটি গোপন মিশনে অংশ নেয় এবং এর ফলে তাদের ব্যক্তিগত জীবনে কি ধরনের প্রভাব পড়ে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।