মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি শিক্ষা বিষয়ক বিভাগ সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়াকে (ইউপেন) তাদের প্রাক্তন নারী সাঁতারু, লিয়া থমাসের ক্রীড়া বিষয়ক সমস্ত রেকর্ড মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লিয়া থমাসকে নারী দলের হয়ে খেলার সুযোগ করে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি যৌন বৈষম্য বিরোধী টাইটেল নাইন আইন লঙ্ঘন করেছে।
সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় জানায়, ইউপেন নারী ক্রীড়াবিদদের সমান সুযোগ দিতে ব্যর্থ হয়েছে, কারণ তারা পুরুষদের (এখানে রূপান্তরিত লিঙ্গের নারীদের বোঝানো হচ্ছে) নারী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। সেই সঙ্গে নারীদের জন্য নির্ধারিত সুযোগ-সুবিধাগুলোও তাদের ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছে।
এই নির্দেশের ফলে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে থমাসের ক্রীড়া জীবনের সমস্ত রেকর্ড বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে, রূপান্তরিত লিঙ্গের কোনো খেলোয়াড়কে নারী দলে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না এবং যে সকল নারী খেলোয়াড় এই বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, তাদের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
২০২২ সালে, লিয়া থমাস মহিলাদের ৫০০-গজ ফ্রিস্টাইল ইভেন্টে ন্যাশনাল কলেজিয়েট অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশন (এনসিএএ) চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিলেন। যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে সরাসরি থমাসের নাম উল্লেখ করা হয়নি, তবে ঘটনার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট যে এই সিদ্ধান্তের মূল কারণ তিনিই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে, ক্রীড়া জগতে রূপান্তরিত লিঙ্গের খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্ক বাড়ে। ট্রাম্প প্রশাসন ‘পুরুষদের নারী ক্রীড়া থেকে দূরে রাখা’ বিষয়ক একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন, যেখানে নারী ও মেয়েদের দলে রূপান্তরিত লিঙ্গের খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণের সুযোগ দিলে ফেডারেল সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল বন্ধ করার কথা বলা হয়।
এই পদক্ষেপের অংশ হিসেবে, ইউপেন ছাড়াও, সান জোস স্টেট এবং ম্যাসাচুসেটস ইন্টারস্কলাস্টিক অ্যাথলেটিক অ্যাসোসিয়েশনের বিরুদ্ধেও টাইটেল নাইন বিষয়ক তদন্ত শুরু করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক এখনো চলমান। এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ মেইন রাজ্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যেখানে রূপান্তরিত লিঙ্গের খেলোয়াড়দের নারী ও মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, হোয়াইট হাউস পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া ১৭৫ মিলিয়ন ডলার ফেডারেল তহবিলও বাতিল করেছে।
এই ঘটনার জেরে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থাগুলোর মধ্যে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেক দেশেই এখন লিঙ্গ পরিচয় এবং ক্রীড়া অংশগ্রহণের নিয়মাবলী নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে।
এই বিতর্কের প্রভাব ভবিষ্যতে খেলাধুলার নিয়মকানুন এবং সমাজে লিঙ্গ পরিচয়ের ধারণার ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন