পোপের মৃত্যু এবং নতুন পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া: ভ্যাটিকানের গোপন রহস্য
ভ্যাটিকান সিটি, (অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস) – যখন কোনো পোপের (Pope) মৃত্যু হয়, তখন ক্যাথলিক চার্চের (Catholic Church) ইতিহাসে এক বিশেষ মুহূর্তের সূচনা হয়। এই সময়টা ‘সিদে ভ্যাকান্তে’ (Sede Vacante) নামে পরিচিত, যার অর্থ ‘শূন্য আসন’।
এই সময়ে নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য কার্ডিনালদের (Cardinals) গোপন বৈঠক বা ‘কনক্লেভ’ (Conclave) শুরু হয়। আসুন, এই নির্বাচনের পেছনের কিছু অজানা তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
পোপের মৃত্যুর পর, ভ্যাটিকানের ক্যামেরলেনগো (Camerlengo) বা পোপের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধায়ক তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং পোপের বাসভবন সিল করেন। তিনিই নতুন পোপ নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত ভ্যাটিকানের প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়গুলো দেখাশোনা করেন।
বর্তমানে এই দায়িত্ব পালন করছেন কার্ডিনাল কেভিন ফারেল। তিনিই সাধারণত পোপের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন।
পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (funeral) সম্পন্ন হওয়ার পর, শোকের আনুষ্ঠানিকতা হিসেবে নয় দিনব্যাপী ‘নভেন্দিয়ালি’ (Novendiali) পালন করা হয়। এরপর, কার্ডিনালরা সকলে একত্রিত হয়ে নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেন।
নির্বাচনের ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কনক্লেভ শুরু হয়। তবে কার্ডিনালরা চাইলে আলোচনার মাধ্যমে দ্রুতও এই প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।
নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য ৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরা ভোট দিতে পারেন। নিয়ম অনুযায়ী, সাধারণত ১২০ জন কার্ডিনাল ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
তবে বাস্তবে এই সংখ্যা কিছু ক্ষেত্রে বাড়তে দেখা যায়। বর্তমানে ১৩৫ জন কার্ডিনাল এই নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য।
কনক্লেভের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য কার্ডিনালদের বিশেষ শপথ নিতে হয়। এমনকি, কনক্লেভের ভেতরের কোনো তথ্য বাইরে প্রকাশ করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তারা ধর্মচ্যুত হবেন।
ভোট গ্রহণের প্রক্রিয়া বেশ গোপনীয়তার সঙ্গে সম্পন্ন হয়। সিস্টিন চ্যাপেলে (Sistine Chapel) ব্যালট পেপারে (Ballot paper) ‘ইলিগো ইন সুমুম পন্টিফেক্স’ (Eligo in Summum Pontificem) অর্থাৎ ‘আমি সর্বোচ্চ পোপ নির্বাচন করছি’ কথাটি লেখা থাকে।
প্রত্যেক কার্ডিনাল তাঁর পছন্দের ব্যক্তির নাম লিখে তা ভাঁজ করে, শপথ নিয়ে একটি পাত্রে জমা দেন। তিনজন স্ক্রুটিনিয়ার (Scrutineers) এই ব্যালটগুলো গণনা করেন।
যদি কেউ প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট না পান, তাহলে ব্যালটগুলো ছিদ্র করে সুতো দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর আবার নতুন করে ভোট নেওয়া হয়।
ভোটের ফল ঘোষণার জন্য সাদা বা কালো ধোঁয়ার সংকেত ব্যবহার করা হয়। যদি কোনো নতুন পোপ নির্বাচিত না হন, তাহলে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। আর নতুন পোপ নির্বাচিত হলে সাদা ধোঁয়া দিয়ে তা ঘোষণা করা হয়।
নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর, তিনি সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা (St. Peter’s Basilica) থেকে ‘হ্যাবেমাস প্যাপাম!’ (Habemus Papam!) অর্থাৎ ‘আমাদের পোপ নির্বাচিত হয়েছেন!’ ঘোষণা করেন। এরপর নতুন পোপ তাঁর প্রথম আশীর্বাদ করেন।
পোপ নির্বাচনের এই প্রক্রিয়াটি শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং বিশ্বজুড়ে ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস