জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সাহায্যকারী সংস্থা ইউএনআরওয়া নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শুনানিতে যোগ দেয়নি ইসরায়েল। সোমবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) এই শুনানি শুরু হয়।
খবর অনুযায়ী, ইসরায়েল জাতিসংঘের এই সংস্থাটির কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার কারণ হিসেবে হামাসের সঙ্গে তাদের যোগসূত্রের অভিযোগ এনেছে।
১৯৪৯ সাল থেকে ইউএনআরওয়া ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সামাজিক পরিষেবা দিয়ে আসছে। সংস্থাটি বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ৬০ লক্ষ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর জন্য কাজ করে।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যেখানে ৪০টি দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখবেন। শুনানির শেষে আইসিজে ইসরায়েলের ওপর তাদের পরামর্শমূলক রায় দেবে।
যদিও এই রায়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, তবুও আন্তর্জাতিক আইন প্রণয়নে এর গুরুত্ব অনেক।
শুনানিতে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সা’র এটিকে ‘লজ্জাজনক প্রক্রিয়া’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং এর মাধ্যমে ইসরায়েলকে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ইউএনআরওয়া ‘হামাস সন্ত্রাসীদের দ্বারা পরিপূর্ণ একটি সংস্থা’। যদিও ইউএনআরওয়া এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে।
শুনানিতে জাতিসংঘের আইনি পরামর্শদাতা বলেছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়া ইসরায়েলের একটি সুস্পষ্ট দায়িত্ব।
এর জবাবে ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি আম্মার হিজাজি বলেন, এই বিষয়ে আদালতের এখতিয়ার নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
তিনি এর আগে গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ এবং পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজায় ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে অবৈধ ঘোষণা করার উদাহরণ টেনে আনেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-এর হামলার পর ইসরায়েল অভিযোগ করে, ইউএনআরওয়ার কিছু কর্মী হামলায় জড়িত ছিল।
যদিও জাতিসংঘের তদন্তে জানা যায়, সংস্থার কয়েকজন কর্মী এতে জড়িত থাকতে পারে।
এরপর ইসরায়েল দাবি করে, গাজায় ইউএনআরওয়ার ১,৪৬২ জন কর্মী সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত।
তবে ইসরায়েল এই দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেনি।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দীর্ঘদিন ধরেই ইউএনআরওয়া ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, এই সংস্থাটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের সমস্যাকে জিইয়ে রেখেছে।
উল্লেখ্য, ইউএনআরওয়ার সংজ্ঞায় ফিলিস্তিনি শরণার্থী বলতে তাদের বংশধরদেরও বোঝানো হয়, যারা ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় বাস্তুচ্যুত হয়েছিল।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এই সংজ্ঞা মানতে নারাজ।
গত অক্টোবরে ইসরায়েলের সংসদ একটি আইন পাস করে, যার মাধ্যমে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ইউএনআরওয়ার কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়।
একই সঙ্গে সংস্থাটিকে সহায়তা করার জন্য ১৯৬৭ সালের চুক্তি বাতিল করা হয়।
ইউএনআরওয়ার প্রধান ফিilippe Lazzarini এই পদক্ষেপকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং সংস্থার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
তথ্য সূত্র: সিএনএন