সিরিয়ার মাটিতে এখনও যুদ্ধের ভয়াবহতা, মাইন-এর বিপদ কাটেনি।
যুদ্ধ থেমে গেলেও সিরিয়ার আকাশে এখনও বিপদচিহ্ন উড়ছে। বাশার আল-আসাদের পতনের পর, সেখানকার সাধারণ মানুষের জীবন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ তাদের পিছু ছাড়ছে না।
সেখানকার মাটিতে পুঁতে রাখা মাইনগুলো আজও কেড়ে নিচ্ছে মানুষের জীবন, কেড়ে নিচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা সিরিয়ার পরিস্থিতিকে আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। সুলাইমান খলিল নামের ২১ বছর বয়সী এক যুবক কয়েক মাস আগে জলপাই ক্ষেতে কাজ করার সময় ভয়াবহ মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন।
বন্ধুদের সঙ্গে জলপাই সংগ্রহ করতে যাওয়া সুলাইমান বুঝতে পারেননি, মাটির নিচে তার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যুর ফাঁদ। একটি মাইন দেখতে পাওয়ার পর তারা যখন পালাতে চেষ্টা করছিলেন, তখনই ঘটে সেই ভয়ংকর বিস্ফোরণ।
প্রথম বিস্ফোরণে সুলাইমানের বাম পা গুরুতর জখম হয়, এরপর আরেকটি বিস্ফোরণে তিনি হাঁটু পর্যন্ত ডান পা হারান। সাহায্যের জন্য চিৎকার করার সময়, কাছেই থাকা এক সেনা সদস্য তাকে উদ্ধার করেন।
আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর হিসাব অনুযায়ী, বাশার আল-আসাদের শাসনের অবসান হলেও, গত ডিসেম্বরের ৮ তারিখ থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৪৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬০ জন শিশু।
আহত হয়েছেন আরও ৩৭৯ জন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)-এর তথ্যমতে, সিরিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে, বিশেষ করে এক সময়ের যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে এখনো কয়েক হাজার মাইন পুঁতে রাখা আছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের মতো এলাকাগুলোতে এখনো প্রচুর মাইন পোঁতা রয়েছে। মূলত সিরীয় সরকারি বাহিনী, তাদের মিত্র এবং বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ২০১১ সাল থেকে ব্যাপকহারে এসব মাইন ব্যবহার করেছে।
যুদ্ধের সময় এসব মাইন স্থাপন করা হলেও, এখন তা সাধারণ মানুষের জন্য এক ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাইন শুধু মানুষ মারে না, বরং এটি মানুষের মনে গভীর ক্ষত তৈরি করে। শারীরিক আঘাতের পাশাপাশি, এটি মানসিক ট্রমা, বাস্তুচ্যুতি, সম্পদ হারানো এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার মতো সমস্যাও তৈরি করে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জাতিসংঘের মাইন অ্যাকশন সার্ভিসের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি বেসামরিক নেতৃত্বাধীন মাইন অপসারণ কর্তৃপক্ষ গঠনের আহ্বান জানিয়েছে।
তাদের মূল উদ্দেশ্য হলো, দ্রুততম সময়ে মাইন অপসারণের কাজ সম্পন্ন করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। যুদ্ধের ক্ষত দ্রুত সারিয়ে তুলতে এই পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা