বার্লিনে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে, যা জার্মানিতে চরম ডানপন্থীদের অপরাধ বেড়ে যাওয়ার একটি উদ্বেজনক চিত্র তুলে ধরছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ার প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০২৪ সালে বার্লিনে আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীদের ওপর ৭৭টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছর, অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়াও, শরণার্থীদের থাকার আটটি জায়গায় ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
এই তথ্য প্রকাশ করেছে স্থানীয় গ্রিন পার্টির দুই সদস্যের অনুরোধের ভিত্তিতে পাওয়া সরকারি পরিসংখ্যান। হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে ৩৪ জনকে, যাদের মধ্যে নারী, পুরুষ, এবং শিশু রয়েছে।
বার্লিনের গ্রিন পার্টির সদস্য আরিও এবরাহিমপুর মির্জাই এই পরিস্থিতিকে “বিপদ ঘণ্টা” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি শরণার্থীদের জন্য সুস্পষ্ট নিরাপত্তা পরিকল্পনা, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি বাড়ানো এবং ডানপন্থী সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
জার্মানিতে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র ও ডরমিটরিতে প্রায় ৩৫ হাজার এবং জরুরি আশ্রয়কেন্দ্রে আরও ১০ হাজার মানুষ বাস করে। এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রায়ই মানসম্মত সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং অতিরিক্ত ভিড়ের অভিযোগ পাওয়া যায়।
শরণার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার মধ্যে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ অন্যতম।
অন্যদিকে, জার্মানিতে নতুন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তবে, কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রের ওপর রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ২১৮টি হামলার ঘটনা ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় অনেক বেশি।
এছাড়াও, আশ্রয়প্রার্থী ব্যক্তিদের ওপর ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণের ঘটনাও ঘটেছে, যদিও এই সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
বামপন্থী দল, “লিঙ্ক”-এর এমপি ক্লারা বুঙ্গার মনে করেন, সরকার দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, “শরণার্থীদের প্রতি অপমান, হুমকি ও হামলার ঘটনাগুলো উদ্বেগের কারণ এবং এটা খুবই দুঃখজনক যে, অনেক রাজনীতিবিদ ও সাধারণ মানুষ এই পরিস্থিতিকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছেন।”
বুঙ্গার অভিবাসন-বিরোধী প্রচারণারও সমালোচনা করেন, যা চরম ডানপন্থী ও মূলধারার দলগুলো করে থাকে।
মার্চ মাসে বার্লিনের কাছাকাছি স্টানসডর্ফ শহরে কয়েকজন চরমপন্থী একটি শরণার্থী শিবিরে জোর করে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়, যেখানে একজন গুরুতর আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হামলার আগে তারা চরম ডানপন্থী স্লোগান দিচ্ছিল।
জার্মানিতে ডানপন্থী চরমপন্থীদের অপরাধ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা অভিবাসন বিরোধী দল “অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড” (এএফডি)-এর রাজনৈতিক উত্থানের সাথে সম্পর্কিত। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে এএফডি ২০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিরোধী দলের প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, অভিবাসন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে এএফডি’র জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সম্প্রতি নতুন চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাওয়া ফ্রিডরিখ মার্চ সীমান্ত নীতি কঠোর করার এবং অনিয়মিত অভিবাসন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: The Guardian