ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান আবারও শুরু হয়েছে, যার ফলস্বরূপ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছে। ইস্টার সানডের ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর এই হামলা চালানো হলো।
কিয়েভ কর্তৃপক্ষের দাবি, রাশিয়া বারবার এই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে।
সোমবার রাশিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়, তারা এখনো তাদের ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রায় আগ্রাসনকে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই বিশেষ সামরিক অভিযান হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রাশিয়ার দাবি, তারা যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে মেনে চলছিল।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধবিরতি আরও ৩০ দিন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন জানালেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে। জেলেনস্কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, তিনি একটি ‘পূর্ণাঙ্গ, সম্পূর্ণ এবং নির্ভরযোগ্য যুদ্ধবিরতি’ চেয়েছিলেন।
তিনি প্রস্তাব করেন, উভয়পক্ষ যেন বেসামরিক অবকাঠামোর ওপর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালানো থেকে বিরত থাকে।
জেলেনস্কি আরও জানান, রাশিয়া আর্টিলারি, ড্রোন এবং পদাতিক বাহিনী ব্যবহার করে বহু হামলা চালিয়েছে। ইস্টার সানডের সময় পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের পোкровস্ক শহরের কাছাকাছি এলাকা ছিল সবচেয়ে সক্রিয়।
এছাড়া, রাশিয়ার সীমান্তবর্তী কুরস্ক অঞ্চলেও ইউক্রেনীয় বাহিনী ছোট একটি ভূখণ্ড ধরে রেখেছে। রাশিয়া অবশ্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করেছে।
ইউক্রেনীয় সেনারা জানিয়েছে, তাদের বিভিন্ন স্থানে রাশিয়ার গোলাবর্ষণ অব্যাহত ছিল। তারা আরও জানায়, রাশিয়া যুদ্ধবিরতির সুযোগ নিয়ে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত সামরিক সরঞ্জাম মেরামতের পাশাপাশি নতুন করে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
ইউক্রেনের ৩৭তম নৌ ব্রিগেডের সদস্য ডেনিস ববকোভ বলেন, “আমাদের জন্য, এটা যুদ্ধের মতোই আরেকটি দিন ছিল, যেখানে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রের শেলিং হয়েছে এবং আমাদের অবস্থানে হামলার চেষ্টা করা হয়েছে।”
বর্তমানে এমন একটা ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, হোয়াইট হাউস রাশিয়ার বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে না।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি জানুয়ারিতে আবার ক্ষমতায় ফেরার পর কিয়েভের কাছে ছাড় দাবি করেছেন, মস্কোর ওপর তেমন কোনো চাপ সৃষ্টি করেননি।
ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং বর্তমান যুদ্ধ শুরুর জন্য তাকে ও জো বাইডেনকে দায়ী করেছেন।
এমনকি, গত সপ্তাহে ইউক্রেনীয় শহর সুমিতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ৩৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনাকে ট্রাম্প ‘ভুল’ বলে উল্লেখ করেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসন একটি ‘শান্তি চুক্তির’ জন্য চাপ দিচ্ছে, যা মূলত রাশিয়ার পক্ষেই যাবে।
এই চুক্তিতে বিদ্যমান ১০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ যুদ্ধ লাইন বরাবর সংঘাত বন্ধ, ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি এবং ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ লাভের ওপর ভেটো দেওয়ার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এছাড়াও, খবর পাওয়া যাচ্ছে যে, রাশিয়া কর্তৃক ২০২২ সালে অধিকৃত জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে একটি ‘নিরপেক্ষ’ অঞ্চলে পরিণত করা হতে পারে। আগামী সপ্তাহে লন্ডনে সম্ভাব্য শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, যেখানে মার্কিন দূতরা অংশ নেবেন।
সোমবার রাশিয়ার প্রেস সেক্রেটারি দিমিত্রি পেসকভ যুক্তরাষ্ট্রের সহানুভূতিপূর্ণ অবস্থানের প্রশংসা করেন।
রাশিয়া জেলেনস্কিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে ইউক্রেনের ‘সামরিকীকরণ’ চায়। পেসকভ বলেন, “আমরা বিভিন্ন পর্যায় থেকে শুনেছি যে, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশ্যই, এটি আমাদের সন্তুষ্ট করে এবং আমাদের অবস্থানের সঙ্গে মিলে যায়।”
যুদ্ধবিরতির আগে রবিবার উভয়পক্ষের মধ্যে কিছুটা শান্ত অবস্থা বিরাজ করছিল, কিন্তু রাশিয়া আবার ইউক্রেনীয় শহরগুলোতে বোমা হামলা শুরু করেছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, সোমবার ভোররাতে দেশটির মধ্য ও পূর্বাঞ্চলে ৯৬টি ড্রোন ও তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। দেশটির অধিকাংশ স্থানে বিমান হামলার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
খেরসনে রাশিয়ার হামলায় তিনজন নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর ওলেক্সান্ডার প্রোকুদিন। টেলিগ্রামে তিনি জানান, একটি আবাসিক এলাকা ও একটি দোকানে আঘাত হানা হয়েছে।
এছাড়া, ডনেৎস্কে হামলায় চারজন আহত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান