আফ্রিকার জঙ্গলে শিম্পাঞ্জিরা কি দলবদ্ধভাবে অ্যালকোহলযুক্ত ফল উপভোগ করে? সম্প্রতি এক গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। বিজ্ঞানীরা ক্যামেরাবন্দী করেছেন, কিভাবে শিম্পাঞ্জিরা তাদের মধ্যে এই ফল ভাগ করে খাচ্ছে।
মানুষের মত, তারাও কি সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করতে মত্ত হচ্ছে?
গবেষণাটি চালানো হয়েছে গিনি-বিসাউয়ের কানতানহিজ জাতীয় উদ্যানে। যুক্তরাজ্যের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণার নেতৃত্ব দিয়েছেন।
তারা জানিয়েছেন, বন্য শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে তারা এমন কিছু ফল ভাগাভাগি করে খেতে দেখেছেন, যাতে সামান্য পরিমাণে অ্যালকোহল ছিল। ফলটি ছিল গাঁজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রস্তুত করা এক ধরনের রুটিফল।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ফলের মধ্যে অ্যালকোহলের মাত্রা ছিল খুবই কম, প্রায় ০.৬১%।
মানুষের ভাষায় বলতে গেলে, এটি হালকা বিয়ারের মত। যদিও অ্যালকোহলের পরিমাণ কম ছিল, তবে শিম্পাঞ্জিরা প্রচুর পরিমাণে এই ফল খেয়েছে।
গবেষক আনা বওল্যান্ড বলেন, “আমরা জানি, মানুষের মধ্যে অ্যালকোহল সেবনের ফলে ডোপামিন ও এন্ডোরফিন নির্গত হয়, যা আনন্দ ও আরামের অনুভূতি দেয়।
এছাড়াও, উৎসবের মত অনুষ্ঠানে অ্যালকোহল ভাগ করে নেওয়ার মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়। এখন যেহেতু আমরা দেখছি, বন্য শিম্পাঞ্জিরাও অ্যালকোহলযুক্ত ফল খাচ্ছে এবং ভাগ করে নিচ্ছে, তাহলে প্রশ্ন হল, তারা কি একই ধরনের সুবিধা পাচ্ছে?”
ক্যামেরার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা ১০ বার শিম্পাঞ্জিদের এই ধরনের আচরণ পর্যবেক্ষণ করেছেন।
তারা দেখেছেন, ফল খাওয়ার সময় তাদের মধ্যে বয়সের কোনো ভেদাভেদ ছিল না।
“চিপ” এবং “আতে” নামের দুটি স্ত্রী শিম্পাঞ্জিকে দেখা গেছে, তারা বড় আকারের ফলের বদলে সামান্য গাঁজন হওয়া ছোট আকারের ফল বেছে নিচ্ছে।
অন্যদিকে “মান্ডজাম্বে” এবং “গ্যারি” নামের দুটি পুরুষ শিম্পাঞ্জিকে দেখা গেছে, তারা পাকা ফলের জন্য ঝগড়া করছে।
গবেষকরা মনে করেন, এই ধরনের আচরণ হয়তো আমাদের সামাজিক উৎসবের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পর্কিত।
গবেষক কিম্বার্লি হকিংস বলেন, “আমাদের আরও গবেষণা করতে হবে, শিম্পাঞ্জিরা কি ইচ্ছাকৃতভাবে এই ধরনের ফল খুঁজে নেয়, নাকি অন্য কোনো কারণে খায়।
তবে এই আচরণ সম্ভবত সামাজিক উৎসবের প্রাথমিক রূপ। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের ভোজের ঐতিহ্য হয়তো বিবর্তনের গভীরে প্রোথিত।”
গবেষণাটি ‘কারেন্ট বায়োলজি’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান