রাশিয়ার বিরোধী নেতা ভ্লাদিমির কারা-মুরজার সাম্প্রতিক কিছু মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সৈন্যদের নিয়ে তিনি এমন কিছু কথা বলেছেন, যা অনেকের কাছে ‘জাতিবিদ্বেষী’ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে।
কারা-মুরজা, যিনি এক সময় ক্রেমলিনের কড়া সমালোচক ছিলেন, ২০১৫ এবং ২০১৭ সালে দু’বার বিষপ্রয়োগের শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও তিনি সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। এরপর ২০২৩ সালে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তিনি ওয়াশিংটন পোস্টের জন্য কলাম লিখে পুলিৎজার পুরস্কারও লাভ করেন। পরে কয়েদি বিনিময়ের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি জার্মানে যান এবং পুতিনের সরকারের বিরুদ্ধে তার কার্যক্রম চালিয়ে যান।
কিন্তু সম্প্রতি, ফ্রান্সের সিনেটে দেওয়া এক বক্তব্যে কারা-মুরজা মন্তব্য করেন, রুশ সেনারা নাকি মানসিক দিক থেকে ইউক্রেনীয়দের হত্যা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, রুশ এবং ইউক্রেনীয়রা একই সংস্কৃতি ও ইতিহাসের অংশ। এই মন্তব্যের পরই বিতর্ক শুরু হয়।
কারা-মুরজার এই মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক রুশ কূটনীতিক, আদিবাসী অধিকার কর্মী এবং অন্যান্য বিরোধী দলের নেতারা। তাদের মতে, কারা-মুরজার এই বক্তব্য সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক এবং ভুল ধারণার জন্ম দিতে পারে।
তারা বলছেন, এই ধরনের মন্তব্য যুদ্ধের ভয়াবহতাকে হালকা করে দেয়।
অন্যদিকে, কারা-মুরজা তার মন্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, তার কথাগুলোকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তার মতে, তিনি রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে বিদ্যমান সাংস্কৃতিক মিলের কথা বলতে চেয়েছেন।
তবে, সমালোচকরা বলছেন, কারা-মুরজার এই ধরনের মন্তব্য যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে রাশিয়াকে উদারনৈতিক করার ক্ষেত্রে একটি কৌশল হতে পারে। তাদের ধারণা, এর মাধ্যমে তিনি রুশ জনগণের সহানুভূতি পেতে চাইছেন, বিশেষ করে যারা এখন নির্বাসনে থাকা বিরোধী নেতাদের সমর্থন করেন।
বস্তুত, রাশিয়া সরকার দরিদ্র অঞ্চল থেকে আসা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের তরুণদের সামরিক বাহিনীতে যোগ দিতে উৎসাহিত করে। এর কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, সৈন্যদের আকর্ষণীয় বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা।
এই অঞ্চলের অনেক মানুষের কাছে সামরিক বাহিনীর চাকরি জীবন পরিবর্তনের একটি উপায়।
বিষয়টি নিয়ে মানবাধিকার কর্মীরাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, এই ধরনের বিভাজনমূলক মন্তব্য যুদ্ধের পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা