স্টাফ রিপোর্টার।
সাতক্ষীরার তালায় দুর্নীতিবাজ ইউএনও শেখ রাসেলের পক্ষে সাফাই গাইতে এবং বদলী ঠেকাতে মানববন্ধনের প্রস্তুতি নিয়েছে একদল ঠিকাদার ও সুবিধাবাদী রাজনৈতিক দলের লোকজন। ইতিমধ্যে সাংবাদিক টিপুর বিরুদ্ধে গতরাত থেকে বিভিন্নজনকে ম্যানেজ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখালেখি শুরু করে দিয়েছে।
শুক্রবার ২৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় তালা উপজেলা ডাকবাংলোয় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দেওয়া হয়। এতে যুবদলের কথিত নেতা ট্যাংরা সাইদ ওরফে ফেন্সিডিল সাইদের পরিচালনায় ও আহবানে উপস্থিত ছিলেন জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু, ইসলামকাটি ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক, বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ শফিকুল ইসলাম, ঠিকাদার জাহাঙ্গীর হোসেন, ক্লিনিক মালিক ফারুক জোয়ার্দার ( যিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রেসক্লাবের সেক্রেটারি পদ দখলকারী) ও সাংবাদিক এম এ হাকিম প্রমুখ।
উপস্থিত ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণ নারী-পুরুষ যেন পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় সেখানে সাংবাদিক জুলফিকার রায়হান, সেলিম হায়দার, কামরুজ্জামান মিঠুও উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ঠিকাদারের অর্থায়নে সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে লেখালেখি বন্ধ করতে তিন জন সাংবাদিককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য গত ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের তালা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ পন্ড করতে রাজনৈতিক দলের ছেসরা ক্যাডার পাঠিয়ে কৌশলে মোটরসাইকেলে করে মানববন্ধন থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হন।
আগামী ২৭ এপ্রিল রবিবার সকাল ১০ টায় ইউএনওর বদলী এবং শাস্তি ঠেকাতে তার পক্ষে সাফাই গাইতে মানববন্ধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তবে তিনি রাজনৈতিক দলের সমর্থন পেতে পাঁচ লক্ষ টাকা বাজেট রেখেছেন। ইতিমধ্যে ঠিকাদারের কাছ থেকে এ টাকা নিয়ে দুর্নীতিবাজ কিছু দলীয় নেতাকর্মীকে দেড় লক্ষ টাকা প্রদান করেছে বলে জানা গেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ রাসেল তৎকালীন ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন । এ কারণে বর্তমান রাজনৈতিক দলের নেতারা তার পক্ষে সমর্থন দিতে না চাওয়ায় অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয়টি সামনে চলে আসে।
উল্লেখ্য ,গত ২২ এপ্রিল উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পে কাজে অনিয়ম দুর্নীতি হচ্ছে মর্মে দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিনিধি রোকনুজ্জামান টিপু ঘটনাস্থলে যান। এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী এম এম মামুন আলমের সাথে কাজের গুণগত মান নিয়ে কথা হলে সাংবাদিক টিপুর সাথে অশালীন মন্তব্য করে কাজের খবর জানতে ‘তুই কে’ বলে মন্তব্য করে হাতে থাকা ছাতা নিয়ে মারতে উদ্যত হন। এ ঘটনার ঘটনায় দুজনের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
পরবর্তীতে উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মামুন উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে খবর দিলে তিনি দ্রুত ভ্রাম্যমান আদালতের নামে সাংবাদিক রোকনুজ্জামান টিপুকে ১০ দিনের কারাদণ্ড এবং ২০০ টাকা জরিমানা করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
টিপুর পক্ষে যেন জামিন বা কোন আপিল করা না হয় সেজন্য তার দপ্তরে সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে কর্মরত টিপুর স্ত্রী কে বিভিন্ন লোক মারফত ভয়-ভীতি দেখানো হয়। এ কারণে গত তিন দিন কারাগারে অতিবাহিত হওয়ার পরেও টিপুর পক্ষে কোন জামিন কিংবা আপিলের আবেদন করা হয়নি।
এ ঘটনায় সারাদেশের সাংবাদিকদের মাঝে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠে এবং ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেয় বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম। সংগঠনটির ২৪ ঘন্টার আলটিমেটামের মুখে বৃহস্পতিবার তাকে জামিন দিতে বাধ্য হন।
এদিকে আগামীকাল রবিবার বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমান আদালতে কথিত রায়ের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন জমা দিবে সাতক্ষীরা আদালতে।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের পক্ষ থেকে সংগঠনটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আহমেদ আবু জাফর দুর্নীতিবাজদের পক্ষ না নিতে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।