ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামের মূল সংস্থা মেটা’র বিরুদ্ধে এবার ঘানাতে মামলার প্রস্তুতি চলছে। সামাজিক মাধ্যমে আপত্তিকর বিষয়বস্তু নিরীক্ষণের (content moderation) কাজে যুক্ত কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগের কারণেই এই আইনি পদক্ষেপ।
জানা গেছে, কর্মীদের চরম মানসিক কষ্টের কারণ হওয়া বিষয়বস্তুগুলোর মধ্যে রয়েছে খুন, চরম হিংসা এবং শিশু যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঘানার আক্রা শহরে মেটা’র হয়ে কন্টেন্ট মডারেশনের কাজ করে মাজোরেল নামক একটি সংস্থা। এই সংস্থায় কর্মরত প্রায় ১৫০ জন কর্মী রয়েছেন।
কর্মীরা জানিয়েছেন, তাঁরা তাঁদের কাজের কারণে মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ, অনিদ্রা এবং মাদকাসক্তির শিকার হয়েছেন। তাঁদের দাবি, সহিংস এবং আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও নিয়মিত দেখতে হওয়ায় তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে।
কর্মীদের অভিযোগ, সংস্থাটির পক্ষ থেকে যে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হয়, তা পর্যাপ্ত ছিল না। এমনকি, কর্মীদের ব্যক্তিগত উদ্বেগের কথা ম্যানেজারদের মধ্যে আলোচনা করা হতো।
এর আগে, কেনিয়ার সামাসোর্স নামক একটি সংস্থায় কর্মরত ফেসবুক কন্টেন্ট মডারেটরদের মধ্যেও একই ধরনের সমস্যা দেখা গিয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ১৪০ জনেরও বেশি কর্মীর গুরুতর পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (PTSD) ধরা পড়েছিল।
তাঁরাও সামাজিক মাধ্যমের ভয়াবহ বিষয়বস্তু দেখতে বাধ্য হতেন।
আফ্রিকার দেশগুলোতে মেটা’র এই ধরনের কর্মী নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কারণ, এই কর্মীদের কম বেতন এবং খারাপ কর্মপরিবেশে কাজ করতে হয়।
কর্মীদের অভিযোগ, তাঁদের কাজের চাপ অত্যন্ত বেশি এবং মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ঘানার কর্মীদের প্রাথমিক বেতন ছিল মাসে প্রায় ১,৩০০ ঘানিয়ান সেডি (বাংলাদেশি মুদ্রায় আনুমানিক প্রায় ১৫,০০০ টাকা)।
যদিও পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে কিছু বোনাস পাওয়ার সুযোগ ছিল, তবে জীবনযাত্রার ব্যয়ের তুলনায় এই বেতন যথেষ্ট ছিল না।
বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাজ্যের একটি অলাভজনক সংস্থা, ফক্সগ্লোভ, আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জানাচ্ছে, কর্মীদের উপর হওয়া এই ‘ভয়ংকর’ নির্যাতনের বিরুদ্ধে তাঁরা সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ফক্সগ্লোভের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং কর্মপরিবেশের উন্নতির জন্য তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন।
অন্যদিকে, মেটা কর্তৃপক্ষের দাবি, কন্টেন্ট মডারেটরদের জন্য তারা উপযুক্ত বেতন ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করে থাকে। কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রশিক্ষিত মনোবিদদের তত্ত্বাবধানে একটি বিশেষ প্রোগ্রামও চালু করা হয়েছে।
তবে কর্মীদের অভিযোগ, মেটা কর্তৃপক্ষের এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।
এই মামলার মাধ্যমে ঘানার আদালত কর্মীর অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। কারণ, বর্তমানে দেশটির আইনে কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সুরক্ষা নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা নেই।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান