কানাডার আসন্ন নির্বাচনে মার্কিন বাণিজ্য নীতির প্রভাব: ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে জনমত?
কানাডায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতির প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, দেশটির ভোটাররা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কড়া সমালোচনা করছেন। নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলে বর্তমান লিবারেল পার্টির জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, যা বাণিজ্য বিষয়ক ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচনের শুরুতে রক্ষণশীল দল, যারা ট্রাম্পের নীতির সমর্থক হিসেবে পরিচিত ছিল, তাদের জনপ্রিয়তা বাড়ছিল। কিন্তু ট্রাম্প যখন কানাডার উপর শুল্ক আরোপ করেন এবং দেশটির সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তখন পরিস্থিতি পাল্টে যায়। এর ফলে, জনমনে জাতীয়তাবোধের উন্মেষ ঘটে এবং ট্রাম্পবিরোধী মনোভাব তৈরি হয়।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর লিবারেল পার্টি নতুন করে সংগঠিত হয় এবং মার্ক কার্নিকে তাদের নেতা হিসেবে নির্বাচিত করে। কার্নি এর আগে ব্যাংক অফ কানাডা এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, ফলে অর্থনীতি বিষয়ক তার অভিজ্ঞতা ভোটারদের মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, কার্নিকে একজন যোগ্য নেতা হিসেবে মূল্যায়ন করার পেছনে ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তাও একটি কারণ।
কানাডার অর্থনীতি অনেকাংশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ রপ্তানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যায়। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কানাডার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে ভোটাররা একটি স্থিতিশীল সরকারের পক্ষে সমর্থন জানাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, কানাডার দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালগোমা স্টিল ট্রাম্পের শুল্কের কারণে কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। এই ঘটনার পর, স্থানীয় শ্রমিকদের মধ্যে চাকরি হারানোর ভয় তৈরি হয় এবং তারা তাদের অর্থনৈতিক সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে এমন একটি সরকারের প্রত্যাশা করে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ক্যালগেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লিসা ইয়ং মনে করেন, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি এবং কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য বানানোর মন্তব্যের কারণে কানাডার জাতীয় পরিচয় হুমকির মুখে পড়েছে বলে ভোটাররা মনে করছেন। এর ফলস্বরূপ, লিবারেল পার্টি জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবোধের অনুভূতি জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
নির্বাচনে জয়ী হলে, লিবারেল পার্টি সম্ভবত ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্ত অবস্থান নেবে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কানাডার এই নির্বাচন শুধু দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং এটি বিশ্বজুড়ে ক্রমবর্ধমান জনতুষ্টিবাদের (পপুলিজম) বিরুদ্ধে একটি সতর্কবার্তা হতে পারে।
এই নির্বাচনের ফলাফল বাংলাদেশের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। কারণ, বিশ্বায়নের যুগে বাণিজ্য নীতি এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, কানাডার নির্বাচন তারই প্রমাণ। বিশেষ করে, যখন কোনো দেশের অর্থনীতি অন্য কোনো বৃহৎ অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল, তখন অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং দূরদর্শী নেতৃত্ব অত্যন্ত জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা