টেক্সাসের একটি ছোট্ট শহর, যা কিনা মেক্সিকোর সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত, সেখানে আজও অম্লান এক বীরের স্মৃতি। ভিয়েতনাম যুদ্ধে নিহত হওয়া মার্কিন মেরিন সেনা সার্জেন্ট আলফ্রেডো “ফ্রেডি” গঞ্জালেজের কথা বলছি, যাঁর নাম দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু তাঁর স্মৃতি, তাঁর আত্মত্যাগ আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে টেক্সাসের এই অঞ্চলে। এডিনবার্গ শহরের এই বীর সন্তানের প্রতি ভালোবাসা আজও অটুট।
সেখানকার রাস্তায়, দোকানে, এমনকি স্কুলের দেয়ালে তাঁর ছবি আজও দেখা যায়। গঞ্জালেজ শুধু একজন সৈনিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন আদর্শ, যাঁর আত্মত্যাগ আজও সেখানকার মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।
তাঁর নামে শহরের একটি প্রধান সড়কের নামকরণ করা হয়েছে, একটি পার্কেরও নামকরণ করা হয়েছে তাঁর নামে। এমনকি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামও তাঁর নামে রাখা হয়েছে, যা সেখানকার শিশুদের মনে দেশপ্রেমের বীজ বুনে দেয়।
ফ্রেডি গঞ্জালেজের দেশপ্রেমের গল্প শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে। তিনি ছিলেন একজন সাধারণ কিশোর, যিনি ফুটবল খেলতে ভালোবাসতেন এবং ক্ষেতে কাজ করতেন।
১৯৬৫ সালে হাই স্কুল পাশ করার পরেই তিনি যোগ দেন মার্কিন মেরিন কোরে। এরপর ভিয়েতনাম যুদ্ধে তিনি দেশের জন্য লড়ে যান।
যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন। সহযোদ্ধাদের জীবন বাঁচাতে গিয়ে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেন। ১৯৬৮ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, যুদ্ধের এক কঠিন মুহূর্তে তিনি মারা যান।
গঞ্জালেজের মা, ডলিয়া গঞ্জালেজ, ছেলের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করে গেছেন। তাঁর শোক পরিণত হয়েছিল এক মহান ব্রতে।
ছেলের স্মৃতিচিহ্নগুলো তিনি সযতনে আগলে রেখেছিলেন। তাঁর সংগ্রহ করা চিঠি, ছবি এবং অন্যান্য স্মারকগুলো এখন সাউথ টেক্সাস হিস্টোরিক্যাল মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
ফ্রেডি গঞ্জালেজের আত্মত্যাগের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে মরণোত্তর কংগ্রেসনাল মেডেল অফ অনার প্রদান করা হয়। তাঁর সম্মানে একটি নৌ-জাহাজেরও নামকরণ করা হয়েছিল, যা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে মার্কিন নৌবাহিনীতে সক্রিয় ছিল।
তবে, বর্তমান সময়ে মার্কিন সরকারের কিছু ওয়েবসাইটে পরিবর্তন আনা হয়েছে, যার ফলস্বরূপ গঞ্জালেজের নাম এবং তাঁর সম্পর্কিত কিছু তথ্য সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি ওয়েবসাইটে এই ধরনের পরিবর্তনের তীব্র নিন্দা করেছেন অনেকে।
তাঁদের মতে, এটা গঞ্জালেজের প্রতি চরম অসম্মান এবং দক্ষিণ টেক্সাসের মানুষের জন্য গভীর আঘাতস্বরূপ। তবে, ডিজিটাল জগৎ থেকে তাঁর নাম মুছে ফেলা হলেও, বাস্তব জগতে, বিশেষ করে তাঁর জন্মস্থান এডিনবার্গে, তাঁর স্মৃতি আজও অম্লান।
স্থানীয় মানুষ, ভেটেরান্স এবং স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সবাই মিলে ফ্রেডি গঞ্জালেজের স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।
এডিনবার্গ শহরের ফ্রেডি গঞ্জালেজ এলিমেন্টারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা তাদের স্কুলের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে ইউএসএস গঞ্জালেজ নামক একটি যুদ্ধজাহাজকে। এই জাহাজের নাবিকেরা প্রায়ই স্কুলে আসে এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরাও টেক্সাসের একটি পতাকা নিয়ে জাহাজে যায়। ফ্রেডি গঞ্জালেজের স্মৃতিচারণে স্থানীয় আমেরিকান লেজিয়ন-এর সদস্যরা একত্রিত হন।
তাঁরা নিয়মিতভাবে গঞ্জালেজের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাঁদের মতে, ফ্রেডি গঞ্জালেজের আত্মত্যাগ অবিস্মরণীয়।
ফ্রেডি গঞ্জালেজের জীবনী বর্তমানে তাঁর মেডেল অফ অনার এবং ইউএসএস গঞ্জালেজের সাথে সম্পর্কিত সরকারি ওয়েবসাইটগুলোতে তালিকাভুক্ত আছে। তাঁর মা, ডলিয়া গঞ্জালেজ, যিনি ৫৬ বছরের বেশি সময় ধরে ছেলের স্মৃতি আগলে রেখেছিলেন, গত বছর ৯৪ বছর বয়সে মারা যান।
এডিনবার্গের মানুষ, সংগ্রহশালা কর্তৃপক্ষ, ছাত্রছাত্রী এবং তাঁর পরিচিতজনেরা আজও ডলিয়া গঞ্জালেজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, ফ্রেডি গঞ্জালেজের স্মৃতিকে অম্লান করে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন