শিরোনাম: ব্যাংককের শান্ত জগৎ: কোলাহল পেরিয়ে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা।
ব্যাংকক, কোলাহলপূর্ণ এই শহর, আলো ঝলমলে রাতের জীবন এবং ব্যস্ততার জন্য সুপরিচিত। তবে এর বাইরেও ব্যাংককের একটি শান্ত, স্নিগ্ধ রূপ রয়েছে, যা হয়তো অনেকের কাছেই অজানা।
পর্যটকদের ভিড় আর গাড়ির হট্টগোলের মাঝেও এখানে লুকিয়ে আছে কিছু নির্মল স্থান, যা আপনাকে এনে দিতে পারে অন্যরকম এক শান্তির ছোঁয়া।
চাও ফ্রায়া নদীর তীরে অবস্থিত ব্যাংককের পশ্চিমাঞ্চলে, কোলাহল থেকে দূরে, এখনো টিকে আছে কিছু পুরনো খাল বা “খ্লং”। এককালে এই খালের জলপথই ছিল শহরটির প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এই খালগুলির আশেপাশে ঘুরে বেড়ানো অনেকটা অন্যরকম অভিজ্ঞতার জন্ম দেয়। এমনই এক ভ্রমণের গল্প শোনাবো আজ।
ক্যাপ্টেন তাই-এর কথা ভাবুন। তিনি যেন এক জীবন্ত শান্ত প্রতিমা।
তাঁর সৌর-চালিত নৌকায় চড়ে, কোলাহলপূর্ণ শহর ছেড়ে, নীরবতার মধ্যে ভ্রমণের সুযোগ হয়। তাঁর নৌকার মৃদু শব্দ, জলের শান্ত স্রোত আর চারপাশের দৃশ্য—সবকিছু মিলে এক অসাধারণ পরিবেশ তৈরি করে।
ক্যাপ্টেন তাই-এর আসল নাম মংকল কিয়াটকানজানাকুল। ৩০ বছর ধরে তিনি আন্দামান সাগরে নৌকার চালক ছিলেন।
অবসর গ্রহণের পর, তিনি এমন একটি উপায় খুঁজছিলেন, যা তাঁকে শহরের কোলাহল থেকে দূরে রাখবে, একইসঙ্গে জলের কাছাকাছিও থাকতে সাহায্য করবে। এরপরই সৌর-চালিত নৌকার ধারণা আসে তাঁর মাথায়।
এই নৌকায় ভ্রমণের সময় আপনি দেখতে পাবেন ওয়াট রাচা ওরাসারাম-এর মতো প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরগুলি। এই মন্দিরগুলির স্থাপত্যশৈলীতে থাই এবং চীনা সংস্কৃতির এক অপূর্ব মিশ্রণ দেখা যায়।
যা পর্যটকদের কাছে সবসময়ই বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। এছাড়াও, কুডি চিন-এর মতো পুরনো পর্তুগিজ সম্প্রদায়ের এলাকাগুলিতেও ঘুরে আসা যায়, যেখানে সংকীর্ণ গলি, পুরনো বাড়িঘর আর স্থানীয় খাবার—সবকিছু মিলে এক ভিন্ন জগৎ তৈরি করে।
এই ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো থোনবুরি এলাকার পুমজাই গার্ডেন। এটি আসলে একটি ফল বাগান, যা এখন একটি কমিউনিটি স্পেসে পরিণত হয়েছে।
এখানে নানা ধরনের গাছপালা আর ফুলের সমাহার মনকে শান্তি এনে দেয়। সেখানকার বাতাস, পাখির ডাক আর প্রকৃতির নীরবতা—সবকিছু মিলে এক স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করে।
পুমজাই গার্ডেনের মালিকের পরিবার এখানে একটি ক্যাফেও চালান, যেখানে বাগানের ফল ও স্থানীয় উপকরণ দিয়ে তৈরি নানান পদ পরিবেশন করা হয়। তাঁদের বিশেষত্ব হলো ‘পমেলো সালাদ’—যা একটি অসাধারণ স্বাদের খাবার।
পুমজাই গার্ডেনের প্রতিষ্ঠাতা, আন্ডারম্যান টিয়েনসুপ, যিনি ‘খুন অ্যান্ডি’ নামে পরিচিত, জানান, তাঁদের পরিবার প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই বাগানটিকে আগলে রেখেছে।
শহরের দ্রুত উন্নয়নের যুগে, সবুজ স্থানগুলি যখন হারিয়ে যাচ্ছে, তখন এই বাগানটি যেন প্রকৃতির এক নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ব্যাংককের এই শান্ত রূপটি সম্ভবত অনেক পর্যটকের কাছেই অজানা। কোলাহল আর ব্যস্ততার মাঝেও, এখানে এমন কিছু স্থান আছে, যা আপনাকে নতুন করে বাঁচতে শেখায়, যা জীবনের অন্য এক দিক উন্মোচন করে।
আপনি যদি ব্যাংকক ভ্রমণে যান, তবে এই শান্ত স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন, যা আপনার ভ্রমণকে আরও অর্থবহ করে তুলবে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।