বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারী ফুটবলের অগ্রযাত্রা: মিশরের অভিজ্ঞতা
ফুটবল খেলাটা পুরুষদের একচেটিয়া—এমন ধারণা ভেঙে দিয়ে মিশরে নারীদের ফুটবল খেলার আগ্রহ বাড়ছে। একসময় যেখানে মেয়েদের খেলাধুলা করাটা সহজ ছিল না, সেখানে এখন পরিস্থিতি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।
বড় ক্লাবগুলো বিনিয়োগ করছে, খেলাগুলো টিভিতে দেখা যাচ্ছে, আর একসময় লুকানো স্বপ্নগুলো ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছে।
আগে, মিশরের নারীদের খেলাধুলা করার ক্ষেত্রে সমাজের অনেক বাধা ছিল। অনেক পরিবার তাদের মেয়েদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করত না, কারণ তারা ফুটবলকে ছেলেদের খেলা হিসেবে বিবেচনা করত।
তাদের ধারণা ছিল, মেয়েদের এই ধরনের খেলাধুলা করা ঐতিহ্যগত লিঙ্গ ভূমিকা লঙ্ঘন করে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে, এই ধারণাগুলো ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে।
মিশরের নারী ফুটবল লিগ ১৯৯৮ সালে শুরু হয়েছিল, তবে শুরুতে এর তেমন প্রসার ছিল না। ২০২১ সাল পর্যন্ত মাত্র ১১টি দল ছিল।
তবে, গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি পাল্টেছে। পাঁচটি নতুন দল যোগ দিয়েছে এবং অনূর্ধ্ব-১৫ এবং অনূর্ধ্ব-১৩ পর্যায়ে মেয়েদের দল তৈরি করা হয়েছে।
আল আহলি ও জামালেকের মতো বড় ক্লাবগুলোও এখন নারী দল গঠন করেছে, যা ফিফার (FIFA) নিয়ম এবং খেলার প্রতি নারীদের আগ্রহ বৃদ্ধির ফল।
এই পরিবর্তনের পেছনে অনেক মানুষের অবদান রয়েছে। সাহার এল-হাওয়ারি, যিনি মিশরের ফুটবল ফেডারেশনের সদস্য ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে নারী ফুটবলের উন্নতির জন্য কাজ করেছেন, তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে।
তিনিই ফিফার কাছে বড় ক্লাবগুলোকে নারী দল তৈরি করতে উৎসাহিত করেছিলেন। এছাড়া, অনেক খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ক্লাবগুলোতে খেলার সুযোগ পেয়েছে, যা একসময় শখের মতো ছিল, এখন তাদের কাছে পেশাদার ক্যারিয়ারের পথ খুলে দিয়েছে।
নারীদের খেলাধুলায় উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং মিশরের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে ‘১০০০ গার্লস, ১০০০ ড্রিমস’ এবং ডাচ অর্থায়নে ‘কেএনভিবি ওয়ার্ল্ডকোচেস’ প্রোগ্রামের মতো উদ্যোগগুলো স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের ক্ষমতায়ন করছে।
বাসংত তারেক, যিনি একজন অভিজ্ঞ খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষক, এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে মেয়েদের খেলাধুলায় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন।
স্কুল ও যুব কেন্দ্রগুলোতেও এখন মেয়েদের ফুটবল দল দেখা যাচ্ছে।
নারী ফুটবলের এই অগ্রযাত্রায় টেলিভিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। মিশরের ওএন স্পোর্টস স্যাটেলাইট চ্যানেলে নারী লিগের ম্যাচগুলো সম্প্রচারিত হচ্ছে।
খেলার মান উন্নয়নের পাশাপাশি খেলোয়াড়দের পরিচিতি বাড়ছে।
তবে, এই উন্নতি ধরে রাখতে হলে আরও অনেক কিছু করতে হবে। নারী ফুটবলের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করা প্রয়োজন।
খেলোয়াড়দের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ভালো সরঞ্জাম এবং খেলাগুলোর মান বাড়ানো দরকার। অনেক খেলোয়াড় এখনো তাদের খেলার খরচ নিজেরাই বহন করে।
মিশরের নারী ফুটবল এখনো সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি, যেখানে পুরুষ ফুটবল জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে।
তবে, আগ্রহ বাড়ছে, এবং এটি একটি ইতিবাচক দিক। নারী ফুটবল খেলোয়াড় ইয়ারা আমির বলেন, “এখন নারী ফুটবলের ধারণা অনেক বদলেছে।
খেলাটি এখন অনেক বেশি দৃশ্যমান। আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।”
এই পরিবর্তন প্রমাণ করে, সমাজে নারীদের জন্য খেলার সুযোগ তৈরি হলে তারা ভালো করতে পারে। নারীদের খেলাধুলায় আরও বেশি সুযোগ দেওয়া হলে, তারা একদিন দেশের জন্য বড় কিছু করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা