ইউক্রেনে রাশিয়ার ব্যাপক ড্রোন ও বিমান হামলা, নিহত কমপক্ষে ৪। গতকাল রবিবার রাশিয়া ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ড্রোন ও বিমান হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
এই হামলার কয়েক ঘণ্টা আগে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ বন্ধের আগ্রহ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্কে রাশিয়ার ছোড়া তিনটি বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। দোনেৎস্ক আঞ্চলিক প্রসিকিউটর অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, শহরটির আবাসিক এলাকায় তিনটি বোমা ফেলা হয়।
এতে একটি দম্পতি (৪৭ ও ৪৮ বছর বয়সী) এবং ৭৮ বছর বয়সী এক বৃদ্ধ নিহত হন। হামলায় অন্তত ২১টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত শিল্পনগরী পাভলোহ্রাদে ড্রোন হামলায় একজন নিহত এবং ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরী আহত হয়েছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে শহরটিতে একটানা হামলা চলছে।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া ১৪৯টি বিস্ফোরক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এর মধ্যে ৫৭টি ভূপাতিত করা হয়েছে এবং ৬৭টিকে অকার্যকর করা হয়েছে।
ওডেসা এবং ঝাইতোমির শহরেও ড্রোন হামলার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে কয়েকজন আহত হয়েছেন। এছাড়া, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসনে বিমান হামলায় চারজন আহত হয়েছে।
এদিকে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দাবি করেছেন, রুশ বাহিনী কুরস্ক অঞ্চলের অবশিষ্ট অংশ পুনরুদ্ধার করেছে। গত আগস্টে ইউক্রেনীয় বাহিনী আকস্মিকভাবে এখানে প্রবেশ করে কিছু অংশ দখল করে নিয়েছিল।
যদিও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, কুরস্কে যুদ্ধ এখনো চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার এক বক্তব্যে জানান, তিনি মনে করেন না প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে চান। তিনি দ্রুত একটি শান্তি চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
এর আগে অবশ্য ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি চুক্তির খুব কাছাকাছি রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় ট্রাম্প প্রায়ই বলতেন, তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন। তবে বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন।
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে ট্রাম্প ইতালিতে গিয়েছিলেন। সেখানে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তার সংক্ষিপ্ত বৈঠক হয়।
পরে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘গত কয়েক দিনে রাশিয়া বেসামরিক এলাকা, শহর ও জনপদে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যার কোনো কারণ ছিল না।’ তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ইঙ্গিত দেন।
পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ফাঁকে ট্রাম্প ও জেলেনস্কির মধ্যে সাক্ষাৎ হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এই প্রথম তাদের মুখোমুখি দেখা হলো।
সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় প্রায় ১৫ মিনিটের বৈঠকে তারা কথা বলেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এই বৈঠক ঐতিহাসিক হতে পারে, যদি এর মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনা যায়।
হোয়াইট হাউসের একজন মুখপাত্র এটিকে ‘খুব ফলপ্রসূ’ বলে মন্তব্য করেছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারকো রুবিও রবিবার বলেছেন, দ্রুত একটি শান্তি চুক্তি হওয়া প্রয়োজন। ওয়াশিংটন বিষয়টি মধ্যস্থতা চালিয়ে যাওয়া উচিত কিনা, তা বিবেচনা করছে।
তিনি বলেন, ‘যদি ফল না আসে, তাহলে আমরা এই প্রচেষ্টায় সময় ও সম্পদ ব্যয় করতে পারি না।’
অন্যদিকে, রাশিয়ার তদন্ত কমিটি জানিয়েছে, তারা মস্কোর কাছে এক শীর্ষ রুশ সামরিক কর্মকর্তার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ইন্টারফ্যাক্স নিউজ এজেন্সির খবর অনুযায়ী, গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি হলেন ইগনাট কুজিন।
তিনি একসময় ইউক্রেনে বসবাস করতেন। তদন্ত কমিটির দাবি, কুজিন দোষ স্বীকার করেছেন এবং তিনি ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছ থেকে অর্থ নিয়েছিলেন।
নিহত সামরিক কর্মকর্তা ইয়ারোস্লাভ মোসকালিক ছিলেন রাশিয়ার জেনারেল স্টাফের প্রধান পরিচালনা বিভাগের উপপ্রধান। শুক্রবার বালিখায় তিনি নিহত হন।
ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরেই ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করার কথা ছিল। তদন্ত কমিটি আরও জানিয়েছে, মোসকালিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা