গ্রিনল্যান্ডকে ‘কিনে নেওয়ার’ প্রস্তাব: ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ডের অনড় অবস্থান।
বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নেওয়ার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ নিয়ে সম্প্রতি নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের নেতারা এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
তাঁরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, গ্রিনল্যান্ড কোনো ‘ক্রয়যোগ্য সম্পত্তি’ নয়।
কোপেনহেগেনে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেন এবং গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডরিক নীলসেন এই বিষয়ে তাঁদের অনড় অবস্থান ব্যক্ত করেন।
নীলসেন বলেন, “আমরা কখনোই এমন কোনো বিষয় হতে পারি না, যা কেউ কিনে নিতে পারে। এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা যা আমরা জানাতে চাই।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ডের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।
নীলসেনের সাম্প্রতিক ডেনমার্ক সফর ছিল তাঁর প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম। এর আগে, এপ্রিলের শুরুতে ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডরিকসেন গ্রিনল্যান্ড সফর করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “এটা শুধু গ্রিনল্যান্ড বা ডেনমার্কের বিষয় নয়।
এটি হলো সেই বিশ্ব ব্যবস্থার প্রশ্ন, যা আমরা বহু প্রজন্ম ধরে আটলান্টিকের ওপারে একসঙ্গে তৈরি করেছি। নিরাপত্তা নিয়ে কোনো আলোচনা হলেও, অন্য কোনো দেশকে দখল করা যায় না।”
মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্সও সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড সফর করেন। সেখানে তিনি ডেনমার্ককে গ্রিনল্যান্ডের জনগণের জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ না করার জন্য সমালোচনা করেন।
এর প্রতিক্রিয়ায় ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লোকে রাসমুসেন বলেন, “আমরা সমালোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে আমরা যে ভাষায় সমালোচনা করা হচ্ছে, তা ভালোভাবে নিচ্ছি না।”
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী নীলসেন জোর দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ডকে পাবে না।
তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা কারো অধীনে নই। আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করব।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গ্রিনল্যান্ডের এই দৃঢ় অবস্থান তাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি গভীর অঙ্গীকারের প্রমাণ। যদিও গ্রিনল্যান্ডের প্রায় ৫৭,০০০ মানুষের অধিকাংশই ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা চায়, তবে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে আগ্রহী নয়।
গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান শুধু তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, বরং আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও এর গুরুত্ব রয়েছে। আর্কটিক অঞ্চলের কৌশলগত গুরুত্বের কারণে গ্রিনল্যান্ডের উপর বিভিন্ন দেশের আগ্রহ রয়েছে।
ডেনমার্ক এবং গ্রিনল্যান্ড তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা।