ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা: যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যনীতি কি বাংলাদেশের উপর প্রভাব ফেলবে?
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই দেশটির আয়কর বাতিলের এবং আমদানি শুল্কের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহের পরিকল্পনার কথা বলেন। তিনি মনে করেন, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের উপর থেকে আয়করের বোঝা কমানো সম্ভব হবে।
কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা কঠিন এবং এর গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে বিশ্ব অর্থনীতিতে।
ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের মূল ধারণা হলো, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে পরিমাণ অর্থ আয়কর থেকে সংগ্রহ করে, সেই পরিমাণ অর্থ তারা আমদানি শুল্কের মাধ্যমে তুলবে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে প্রতি বছর প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়।
অর্থনীতিবিদদের মতে, যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হয়, তবে বর্তমানে বিদ্যমান শুল্কের হার অনেক বাড়াতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বিদ্যমান শুল্ক হার যদি প্রায় ২৩ শতাংশ হয়, তবে আয়করের বিকল্প হিসেবে এই হারকে চার গুণের বেশি বাড়াতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে চাওয়া যেকোনো পণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যাবে।
ফলে, একদিকে যেমন ভোক্তাদের উপর চাপ বাড়বে, তেমনিভাবে পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য করে এবং তাদের অর্থনীতি এর উপর নির্ভরশীল।
শুল্কের হার বাড়ানো হলে, সেই দেশগুলোর রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
কারণ, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের অন্যতম প্রধান বাজার হলো যুক্তরাষ্ট্র। শুল্ক বাড়ানো হলে, বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যেতে পারে, যা দেশের অর্থনীতিকে দুর্বল করে দেবে।
তবে, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শুল্ক বাড়ানোর ফলে দেশীয় উৎপাদনে উৎসাহ দেওয়া যাবে, যা কর্মসংস্থান বাড়াতে সহায়ক হবে।
যদিও এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হলে তা একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তেমনিভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতেও বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোকে এই পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত থাকতে হবে, যাতে করে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন