যুক্তরাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা নাকি ডোনাল্ড ট্রাম্পের মালিকানাধীন স্কটল্যান্ডের টার্নবেরি গল্ফ কোর্সে ২০২৮ সালের ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। সম্প্রতি এমনটাই জানা গেছে।
বিশ্বখ্যাত এই গল্ফ টুর্নামেন্ট আয়োজনের ব্যাপারে হোয়াইটহল কর্মকর্তাদের আগ্রহ নিয়ে এখন আলোচনা চলছে।
খবর অনুযায়ী, ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা আরএন্ডএ (R&A)-এর কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।
আরএন্ডএ হলো এই চ্যাম্পিয়নশিপের আয়োজক সংস্থা। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, ট্রাম্পের টার্নবেরিতে টুর্নামেন্টটি আয়োজনে কি কি বাধা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে, সরাসরি সরকারের পক্ষ থেকেই এই বিষয়ে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যদিও অন্য একটি সূত্র বলছে, ঠিক চাপ নয়, বরং সম্ভাব্য সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
আলোচনায় জড়িত একজন ব্যক্তির মতে, ব্রিটিশ সরকার ট্রাম্পের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে। আর সম্ভবত সে কারণেই সংস্কৃতি, মিডিয়া এবং ক্রীড়া বিষয়ক দপ্তর (ডিসিএমএস) টার্নবেরিতে ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ ফেরানোর ব্যাপারে উৎসাহ দেখাচ্ছে।
ডিসিএমএস এবং ট্রাম্প টার্নবেরি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কথোপকথন সম্পর্কে অবগত আরও দুইজন জানিয়েছেন, ট্রাম্প বেশ কয়েকবার টার্নবেরিতে ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ২০১৪ সাল থেকে এই মাঠের মালিক।
২০২৩ সালে ট্রাম্প নিজেও প্রকাশ্যে এই কোর্সে ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘সবাই এখানে ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ দেখতে চায়।’ এমনকি রাজা তৃতীয় চার্লসও টার্নবেরির গুরুত্ব স্বীকার করে ট্রাম্পকে স্কটল্যান্ডের একটি এস্টেট পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।
এই টুর্নামেন্ট আয়োজিত হলে টার্নবেরির পরিচালনাকারী সংস্থা, এসএলসি টার্নবেরির জন্য তা আর্থিক দিক থেকে সহায়ক হবে।
কারণ গত বছর কোম্পানিটি প্রায় ১.৭ মিলিয়ন পাউন্ড লোকসান গুনেছিল। যদিও তার আগের বছর তারা প্রায় ৫ লক্ষ ৭১ হাজার পাউন্ড লাভ করেছিল।
উল্লেখ্য, গত ১০ বছরে এটাই ছিল তাদের একমাত্র মুনাফা।
ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ আয়োজনের জন্য আরএন্ডএ সাধারণত ৯ থেকে ১০টি ঐতিহ্যপূর্ণ মাঠ বিবেচনা করে।
এর মধ্যে রয়েছে সেন্ট অ্যান্ড্রুজ এবং রয়্যাল বার্কডেলের মতো বিখ্যাত স্থান। টার্নবেরিও সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত, যেখানে ২০০৯ সালে এই চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
তবে গল্ফ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেই সময়ের থেকে এখন এই ইভেন্টের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, ২০০৯ সালের ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপে যেখানে ১ লক্ষ ২৩ হাজার দর্শক সমাগম হয়েছিল, সেখানে গত বছর রয়্যাল ট্রুনে এই সংখ্যাটা ছিল আড়াই লক্ষের বেশি।
২০২১ সালের ৬ই জানুয়ারি ট্রাম্প সমর্থকদের ক্যাপিটলে হামলার ঘটনার পর আরএন্ডএ প্রথমে টার্নবেরিতে টুর্নামেন্ট আয়োজনে রাজি ছিল না।
তারা কোনো ‘মিডিয়া বিতর্ক’ তৈরি করতে চায়নি।
তবে সম্প্রতি আরএন্ডএ-এর নেতৃত্ব পরিবর্তন হয়েছে। নতুন প্রধান নির্বাহী মার্ক ডারবন গত সপ্তাহে জানিয়েছেন, তিনি চান চ্যাম্পিয়নশিপটি আবার টার্নবেরিতে ফিরে আসুক।
সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আরএন্ডএ-এর আলোচনায় মূলত টার্নবেরিতে এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের লজিস্টিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
কর্মকর্তাদের মতে, মাঠটিতে দর্শক আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সড়ক, রেল ও বিমান পথের অপ্রতুলতা একটি বড় সমস্যা।
কারণ টার্নবেরি থেকে গ্লাসগোর দূরত্ব প্রায় আড়াই ঘণ্টার ট্রেন জার্নি, অথবা এক ঘণ্টার সড়কপথ।
ডারবন গত সপ্তাহে বলেছিলেন, ‘টার্নবেরিতে সড়ক, রেল এবং আবাসনের অবকাঠামো নিয়ে কিছু লজিস্টিক ও বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
আমরা সেখানে ফিরে আসার সম্ভাবনা এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিয়ে কাজ করছি।’ একজন মন্ত্রী জানিয়েছেন, এই ভেন্যুটিকে উপযোগী করতে কয়েক কোটি পাউন্ড বিনিয়োগের প্রয়োজন হতে পারে।
আরএন্ডএ-এর একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘আমরা নিয়মিতভাবে সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে ভেন্যু নিয়ে আলোচনা করি।
আমরা সরকারকে টার্নবেরির লজিস্টিক চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানিয়েছি এবং তারা বিষয়টি জানেন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান