যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে, ওয়ালমার্ট ও টার্গেটের মতো বৃহৎ মার্কিন খুচরা বিক্রেতারা তাদের চীনা সরবরাহকারীদের সাথে ব্যবসা পুনরায় শুরু করেছে।
জানা গেছে, শুল্কের অনিশ্চয়তা নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সরবরাহ বন্ধ থাকার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর মার্কিন শুল্কের কারণে সৃষ্ট উদ্বেগের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ওয়ালমার্ট, টার্গেট, লোয়েস এবং হোম ডিপোর প্রধান নির্বাহীদের বৈঠকের কয়েক দিন পরেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
বৈঠকে খুচরা বিক্রেতারা সতর্ক করে বলেছিলেন যে, শুল্কের কারণে আমেরিকার দোকানগুলোতে পণ্যের অভাব দেখা দিতে পারে। যদিও ব্যবসা পুনরায় শুরু হয়েছে, তবে তা এখনো আংশিকভাবেই চলছে।
এর মাধ্যমে, খুচরা বিক্রেতারা তাদের দোকানে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে চাইছে, কারণ শুল্ক তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। এই সরবরাহ ব্যবস্থা তাদের ব্যবসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেই সঙ্গে চীনের হাজার হাজার কারখানার টিকে থাকার ক্ষেত্রেও এটি জরুরি।
চীনের খেলনা প্রস্তুতকারক ভিভি টং জানান, ওয়ালমার্ট গত সপ্তাহে তাদের কাছ থেকে নতুন করে অর্ডার দেওয়া শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, শুল্ক কমে যাওয়ার ইঙ্গিত পাওয়ার পরেই এমনটা হয়েছে। টং-এর মতে, তাদের ক্লায়েন্টরা সাধারণত এই সময়ে প্রাথমিক অর্ডার দিয়ে থাকে, কারণ মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত খেলনা উৎপাদন ও সরবরাহের শীর্ষ সময়।
চীনের বাজারে মার্কিন শুল্কের প্রভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা রপ্তানিকারকদের জন্য আর্থিক ও নীতিগত সহায়তা বাড়াবে।
এছাড়াও, অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রবেশ এবং অন্যান্য বাজারে ব্যবসার প্রসার ঘটাতেও সহায়তা করা হবে।
ওয়ালমার্ট ও টার্গেট উভয়ই চীন থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে। শুল্কের কারণে তাদের সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।
কিছু ক্ষেত্রে, সরবরাহকারীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং তাদের মুনাফা কমে যাচ্ছে। অনেক চীনা কারখানা, যারা এই দুটি বৃহৎ কোম্পানির জন্য পণ্য তৈরি করে, তারা এখন টিকে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।
এই পরিস্থিতি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুচরা বিক্রেতাদের জন্যই উদ্বেগের কারণ নয়, বরং চীনের অর্থনীতিতেও এর বড় প্রভাব পড়তে পারে।
চীনের রপ্তানি শিল্প প্রায় ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করে। ফলে, বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এই বিপুল সংখ্যক মানুষের রুজি-রোজগার ঝুঁকির মুখে পড়েছে।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় চীন সরকার রপ্তানিকারকদের জন্য নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তারা অভ্যন্তরীণ বাজার এবং অন্যান্য বাজারে ব্যবসার সুযোগ তৈরি করতে চাইছে। তবে, এই পদক্ষেপগুলো কতটুকু কার্যকর হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ওয়ালমার্ট এবং টার্গেটের এই পদক্ষেপ একদিকে যেমন তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা, তেমনই অন্যদিকে, চীনের অর্থনীতির ওপর শুল্কের প্রভাব কিছুটা হলেও কমাতে সাহায্য করবে।
তবে, বাণিজ্য যুদ্ধ কবে শেষ হবে এবং পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন