ভিয়েতনামের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তির পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন স্থানে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে। এই উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ, যা দেশটির ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে, ১৯৭৫ সালে, উত্তর ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট সরকার দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাজধানী সাইgon দখল করে, যা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ডেকে আনে এবং দেশটির পুনর্মিলন ঘটায়। পরবর্তীতে সাইgon-এর নামকরণ করা হয় হো চি মিন সিটি, যা ভিয়েতনামের স্বাধীনতা সংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা হো চি মিনের প্রতি উৎসর্গীকৃত।
হো চি মিন সিটিতে অনুষ্ঠিত কুচকাওয়াজে লাল পতাকা হাতে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেন এবং দেশাত্মবোধক গান পরিবেশন করেন। কুচকাওয়াজের একেবারে সামনে ছিল একটি পদ্ম ফুলের আকারের প্রতিকৃতি, যার ওপর স্থাপিত ছিল হো চি মিনের ছবি।
আকাশে যুদ্ধবিমান এবং হেলিকপ্টারগুলো লাল পতাকা উড়িয়ে মহড়া দেয়। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন একাত্তর বছর বয়সী প্রবীণ সৈনিক ট্রান ভ্যান ট্রুং।
তিনি জানান, তিনি উত্তর ভিয়েতনাম থেকে এই কুচকাওয়াজ দেখতে এসেছেন এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামকে মুক্ত করতে পেরে গর্বিত। তিনি আরও বলেন, “যুদ্ধে যা ঘটেছে, তা তো ঘটেছে। এখন আমাদের উচিত একসঙ্গে এই যুদ্ধের সমাপ্তি উদযাপন করা।”
এই কুচকাওয়াজে প্রথমবারের মতো চীন, লাওস এবং কম্বোডিয়ার তিন শতাধিক সৈন্য অংশ নেয়। ভিয়েতনামের এই স্বাধীনতা সংগ্রামে চীনের প্রায় তিন লক্ষাধিক সৈন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
তারা বিমান বিধ্বংসী প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য রসদ সরবরাহ করে সহযোগিতা করেছিল। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভিয়েতনামের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে চীনকে তাদের ঐতিহাসিক অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে, এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, ভিয়েতনামের পররাষ্ট্রনীতি এখনো তাদের দিকে ঝুঁকে পড়েনি।
বর্তমানে, ভিয়েতনাম ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৩০ বছর পূর্তি হচ্ছে। ২০২৩ সালে, যুক্তরাষ্ট্র-ভিয়েতনাম সম্পর্ক “কম্প্রিহেনসিভ স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার” পর্যায়ে উন্নীত হয়, যা দেশটির সঙ্গে যেকোনো দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ কূটনৈতিক সম্পর্ক।
এটি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভিয়েতনামের সম্পর্কের সমতুল্য। তবে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন দেখা যাচ্ছে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক আরোপ এবং বৈদেশিক সাহায্য হ্রাস করা হয়, যা দেশটির যুদ্ধ-পরবর্তী পুনর্বাসন প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করেছে।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার এত বছর পরেও, দেশটির গ্রামাঞ্চলে এখনো ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’-এর দূষণ এবং বিস্ফোরিত না হওয়া বোমা (Unexploded ordnance) মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপের কারণে এই সমস্যাগুলো সমাধানে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।