অস্ট্রেলিয়ায় আসন্ন নির্বাচনে ভোটারদের প্রধান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির আবাসন সংকট। বাড়ি কেনার সামর্থ্য হারিয়ে দিশেহারা সাধারণ মানুষ।
একদিকে আকাশছোঁয়া বাড়ির দাম, অন্যদিকে ভাড়ার চাপ—এই দুইয়ের মাঝে পরে জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে অনেকের। সম্প্রতি দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন চিত্র উঠে এসেছে, যা বাংলাদেশি পাঠকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনিসহ বিভিন্ন শহরে বাড়ি ভাড়ার সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। যারা বাড়ি কিনতে পারছেন না, তাদের জন্য ভাড়াও এখন দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।
জীবন ধারণের খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারকে খাদ্য এবং ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ছেন, বিশেষ করে বয়স্ক এবং কম আয়ের মানুষেরা এই সংকটে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
সিডনির কাছাকাছি ব্লু মাউন্টেনসের বাসিন্দা ৭১ বছর বয়সী ক্রিস নামের এক বৃদ্ধা জানান, বিবাহবিচ্ছেদের পর তিনি প্রায় গৃহহীন হয়ে পড়েছিলেন। বাড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় তার আশ্রয় খুঁজে বের করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমি এমন অনেক মানুষের গল্প শুনি, যাদের একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হতে হয়েছে।”
এই সংকট সমাধানে রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিলেও, সমালোচকরা বলছেন, মূল সমস্যা সমাধানে তারা যথেষ্ট পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
আসন্ন নির্বাচনে প্রধান দলগুলো— লেবার পার্টি এবং লিবারেল পার্টি-ন্যাশনাল পার্টি জোট—উভয়ই আবাসন সংকট নিরসনে কিছু প্রস্তাব দিয়েছে।
লেবার পার্টি নতুন বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং আর্থিক সহায়তা বাড়ানোর কথা বলছে। অন্যদিকে, লিবারেল পার্টি নির্মাণ শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ এবং অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের কথা জানিয়েছে।
তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরবরাহ ঘাটতি এই সংকটের মূল কারণ। অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা বাড়লেও, সেই তুলনায় নতুন বাড়ির সরবরাহ হচ্ছে না।
বিশেষ করে, সরকারি আবাসনের নির্মাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে প্রায় ১ লাখ ৬৯ হাজার পরিবার সরকারি আবাসনের জন্য অপেক্ষা করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আবাসন সংকটের পেছনে আরও কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হলো ‘NIMBYism’, অর্থাৎ ‘Not In My Backyard’ মানসিকতা।
এর ফলে নতুন আবাসন প্রকল্প তৈরি হতে বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া, নির্মাণ শ্রমিকের অভাবও একটি বড় সমস্যা।
আবাসন সংকট নিরসনে সরকারের পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরের মানুষের সচেতনতা এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। নীতিনির্ধারকদের এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যা সাধারণ মানুষের জন্য একটি বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা