যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ক্রিস্টিন নোয়েম জানিয়েছেন, যদি কোনোভাবে সালভাদরের নাগরিক কিলমার অ্যাব্রেগো গার্সিয়াকে আবার যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানো হয়, তবে তাকে সঙ্গে সঙ্গেই পুনরায় নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। অভিবাসন বিষয়ক জটিলতা এবং আদালতের নির্দেশ অমান্য করার অভিযোগের মধ্যে এই মন্তব্য করেছেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন এর আগে স্বীকার করেছিল যে, গত মাসে মেরিল্যান্ড থেকে গার্সিয়াকে ভুল করে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সিবিএস নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে নোয়েম জানান, “গার্সিয়া আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। তিনি একজন সালভাদরীয় নাগরিক এবং বর্তমানে নিজের দেশেই বসবাস করছেন।
যদি তাকে কোনোভাবে আবার যুক্তরাষ্ট্রে আনা হয়, তবে আমরা তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আবার নিজ দেশে ফেরত পাঠাবো।”
প্রায় এক দশক আগে, ২০১১ সালের দিকে গার্সিয়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিলেন। ধারণা করা হয়, গ্যাং সহিংসতার কারণে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সময়ে, গার্সিয়াকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে একটি ফেডারেল সুরক্ষা আদেশ দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু আদালতের সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে গত ১৫ই মার্চ তাকে এল সালভাদরে ফেরত পাঠায় মার্কিন অভিবাসন ও শুল্ক কর্তৃপক্ষ। সেখানে তাকে কুখ্যাত একটি কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসন গার্সিয়ার নির্বাসনে ‘প্রশাসনিক ত্রুটি’র কথা স্বীকার করলেও, তারা বারবার তাকে এমএস-১৩ গ্যাংয়ের সদস্য হিসেবে উল্লেখ করেছে। যদিও গার্সিয়ার স্ত্রী এবং আইনজীবীরা এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। আদালত নথিপত্র অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে গার্সিয়ার কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই।
গার্সিয়াকে ফেরত পাঠানোর পর, সুপ্রিম কোর্ট তাকে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দিলেও ট্রাম্প প্রশাসন তাকে ফিরিয়ে আনতে রাজি হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, গার্সিয়া যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন, তাই দেশটির আদালতের এই বিষয়ে এখতিয়ার নেই।
নোয়েম সিবিএসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তার প্রশাসন আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এই ব্যক্তির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এখতিয়ার নেই। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকও নন। তিনি তার নিজ দেশে আছেন এবং সেখানকার সরকারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।”
গত সপ্তাহে, একজন ফেডারেল বিচারক হোয়াইট হাউজের বিরুদ্ধে এই মামলায় ‘সততা’র অভাবের অভিযোগ করেন। তিনি যুক্তি দেন, “আসামিপক্ষ আদালতের নির্দেশ অমান্য করার জন্য বিশেষ সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করেছে।”
এদিকে, নোয়েম দাবি করেছেন, তার প্রশাসন গ্যাং সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা তৈরি করতে ‘ঘণ্টা এবং ঘণ্টা’ সময় ব্যয় করে। তবে, যাদেরকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই আমাদের তদন্তকারী দল এবং বিশেষজ্ঞদের ওপর নির্ভর করছি।
আমরা প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে যাচাই করছি এবং নিশ্চিত করছি যে, আমরা সবকিছু সঠিকভাবে করেছি।”
নোয়েম আরও অভিযোগ করেন, যে সমস্ত ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছেন, তারা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত যে, এই বিচারকরা প্রশাসনের প্রতিটি পদক্ষেপের বিরোধিতা করে যাবেন।” যদিও এই মামলার কয়েকজন বিচারক রিপাবলিকানদের দ্বারা মনোনীত হয়েছিলেন।
এই মাসের শুরুতে, রোনাল্ড রেগান কর্তৃক নিযুক্ত এবং রক্ষণশীল আপিল আদালতের বিচারক জে হার্ভি উইলকিনসন গার্সিয়ার মামলার বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্যকে ‘বিস্ময়কর’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এটা শুধু বিচারকদের জন্যই নয়, বরং আদালতের বাইরে থাকা আমেরিকানদের স্বাভাবিক স্বাধীনতার ধারণাকেও নাড়া দেয়।”
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান