মার্কিন সুপ্রিম কোর্টে চার্চ ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণ নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি চলছে। ওকলাহোমার একটি চার্টার স্কুলে সরকারি অর্থায়ন করা হবে কিনা, সেই প্রশ্নেই এখন প্রধান বিচারপতি জন রবার্টসের রায় দেওয়ার দিকে তাকিয়ে সকলে। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস-এর দেওয়া আগের কয়েকটি রায় এই বিতর্কের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। তিনি কি এবারও একই পথে হাঁটবেন?
যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে, বিশেষ করে প্রথম সংশোধনীতে, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সরকারের ধর্মীয় বিষয়ে নিরপেক্ষতা রক্ষার কথা বলা হয়েছে। এই মামলার কেন্দ্রে রয়েছে এই দুটি বিষয়। সরকারি অর্থে পরিচালিত চার্টার স্কুলগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া যাবে কিনা, সেই প্রশ্নই এখন আলোচনার বিষয়।
আদালতে বিতর্কটি মূলত দুটি ধারায় বিভক্ত। একদল মনে করেন, ধর্মীয় স্কুলগুলোতে সরকারি অর্থ দেওয়া হলে তা সংবিধানের লংঘন হবে। কারণ এর ফলে সরকার প্রত্যক্ষভাবে একটি নির্দিষ্ট ধর্মকে সমর্থন করবে। অন্যপক্ষের যুক্তি হলো, সরকার যদি সব ধরনের স্কুলের জন্য অর্থ দেয়, তাহলে কোনো ধর্মকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই।
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস-এর আগের কয়েকটি রায়ে ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিষয়গুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। ২০১৭ সালে দেওয়া এক রায়ে তিনি বলেছিলেন, একটি চার্চ স্কুলে খেলার মাঠ সংস্কারের জন্য সরকারি অর্থ দেওয়া যেতে পারে, যেমনটা অন্যান্য অ-ধর্মীয় স্থানে দেওয়া হয়। ২০২০ ও ২০২২ সালের দুটি রায়ে তিনি ধর্মীয় স্কুলগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সহায়তা দেওয়ার পক্ষে মত দেন।
তবে, বর্তমান মামলাটি আগেরগুলোর চেয়ে ভিন্ন। এখানে সরাসরি সরকারি অর্থায়নের মাধ্যমে ধর্মীয় শিক্ষার বিষয়টি জড়িত। বিচারপতিরা মনে করেন, এই মামলায় রায় দেওয়ার সময় জন রবার্টসকে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ এর প্রভাব সুদূরপ্রসারী হতে পারে।
শুনানিতে বিচারপতিরা জন রবার্টসকে তার আগের রায়গুলোর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করেন এবং নতুন এই মামলার গুরুত্ব তুলে ধরেন। এই মামলার রায় যদি ওকলাহোমার পক্ষে যায়, তাহলে তা অন্যান্য রাজ্যেও একই ধরনের ঘটনার জন্ম দিতে পারে, যেখানে চার্টার স্কুলগুলোতে ধর্মীয় শিক্ষার সুযোগ তৈরি হবে।
মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন বলে মনে হয়েছে। তিনি পূর্বে দেওয়া রায়গুলোর সঙ্গে বর্তমান মামলার সংযোগ স্থাপন করতে চেষ্টা করেছেন, তবে একই সঙ্গে এই মামলার ব্যাপকতা নিয়েও তার উদ্বেগ ছিল।
যদি জন রবার্টস রক্ষণশীল বিচারপতিদের সঙ্গে একমত হন, তবে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ওকলাহোমার পক্ষে রায় আসতে পারে। কিন্তু তিনি যদি উদারপন্থী বিচারপতিদের সঙ্গে যোগ দেন, তাহলে এই মামলার নিষ্পত্তি নাও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ওকলাহোমা সুপ্রিম কোর্টের আগের সিদ্ধান্ত বহাল থাকবে।
এই মামলার রায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নয়, বরং সারা বিশ্বের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। কারণ, এটি ধর্ম ও রাষ্ট্রের সম্পর্ক, ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং সরকারি অর্থায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশের মতো বহু-সাংস্কৃতিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ দেশগুলোতেও এই ধরনের মামলার প্রভাব থাকতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন