শিরোনাম: অ্যান্টিবায়োটিকের অভাব: সুপারবাগ বিস্তারের ঝুঁকি, বাংলাদেশের জন্য জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান
বর্তমান বিশ্বে অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রতুলতা এক মারাত্মক স্বাস্থ্য সংকট তৈরি করছে। সম্প্রতি *The Lancet Infectious Diseases*-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে, দরিদ্র ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই দেশগুলোতে মারাত্মক ওষুধ প্রতিরোধী সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৭ শতাংশেরও কম মানুষ প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক পান। এর ফলে শুধু যে রোগীর জীবনহানি ঘটছে তা নয়, বরং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (AMR) বা অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়ার বিস্তার ঘটছে, যা ‘সুপারবাগ’ নামে পরিচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ এ কারণে বিশ্বে প্রতি বছর ১ কোটি ৯০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
গবেষণাটি মূলত আটটি দেশের ডেটা বিশ্লেষণ করে তৈরি করা হয়েছে। দেশগুলো হলো বাংলাদেশ, ব্রাজিল, মিশর, ভারত, কেনিয়া, মেক্সিকো, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে এই আটটি দেশে কার্বাপেনেম-প্রতিরোধী গ্রাম-নেগেটিভ (CRGN) সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ লক্ষ এবং মৃতের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার। অথচ, এই রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক সরবরাহ করা গেছে খুবই সামান্য।
গবেষণার প্রধান লেখক ও গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ (GardP)-এর গ্লোবাল অ্যাক্সেস ডিরেক্টর ড. জেনিফার কোহনের মতে, “উন্নত দেশগুলোতে অ্যান্টিবায়োটিকের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা গেলেও দরিদ্র দেশগুলোতে এই সুযোগ সীমিত।
এর প্রধান কারণ হলো, দরিদ্র দেশগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা দুর্বল এবং অনেক রোগী অ্যান্টিবায়োটিক কেনার সামর্থ্য রাখে না।
চিকিৎসকদের মতে, অ্যান্টিবায়োটিকের অভাবের কারণে রোগীরা দুর্বল হয়ে পড়ছে এবং তাদের মধ্যে সংক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসার অভাবে রোগীরা অন্য, কম কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে, যা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংকট মোকাবিলায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অ্যান্টিবায়োটিকের অপ্রতুলতা একটি গুরুতর উদ্বেগের কারণ। এখানেও অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার এবং সহজলভ্যতার অভাব দেখা যায়।
তাই, দেশের সরকার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং জনসাধারণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। এই সংকট মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ না নিলে, ভবিষ্যতে এর ফলস্বরূপ আরও অনেক মানুষের জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে।
এই সমস্যা সমাধানে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে অ্যান্টিবায়োটিকের সংকট কাটিয়ে বাংলাদেশকে একটি সুস্থ ও নিরাপদ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।
তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান