যুক্তরাষ্ট্রের অরেগন অঙ্গরাজ্যের একটি জাতীয় বন থেকে কয়েক বছর ধরে বসবাস করা বাস্তুহারাদের উচ্ছেদ করতে শুরু করেছে ইউএস ফরেস্ট সার্ভিস। বন বিভাগের এই সিদ্ধান্তের ফলে সেখানকার প্রায় ১৫০ জন মানুষ তাদের বাসস্থান হারাতে বসেছে।
বন পরিষ্কার করে বন্যাকবলিত এলাকার পুনর্বাসনের একটি প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হচ্ছে।
ডেসচুটস ন্যাশনাল ফরেস্টে বন পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের এই বিশাল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে, যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো দাবানলের ঝুঁকি কমানো। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের আওতায় ছোট গাছপালা অপসারণ, আবর্জনা পরিষ্কার এবং হাজার হাজার একর জমিতে নিয়ন্ত্রিত অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হবে।
এই কাজের জন্য আগামী এক বছর ওই এলাকার প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তবে এই সিদ্ধান্তের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। গৃহহীনদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর মতে, বন বিভাগের এই পদক্ষেপের পেছনে অন্য কারণ থাকতে পারে। তাদের ধারণা, বনের কাঠ ব্যবসার সুযোগ তৈরি করার জন্যই হয়তো এমনটা করা হচ্ছে।
কারণ, সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন বন ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়ার জন্য একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেছে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল কাঠের উৎপাদন বৃদ্ধি করা এবং দাবানলের ঝুঁকি কমানো।
বন বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন পরিষ্কারের এই কাজটি জরুরি ভিত্তিতে করা হচ্ছে, কারণ এখানে ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হবে এবং গাছ কাটার কাজ চলবে।
এছাড়া, এখানে বিপজ্জনক কিছু বস্তুরও সন্ধান পাওয়া গেছে। এই পরিস্থিতিতে জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই এলাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বুধবার রাতে অনেক বাস্তুহারা তাদের ট্রেলার, আরভি এবং তাঁবুগুলো সরানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েন। বৃহস্পতিবার সকালে বন বিভাগের কর্মকর্তারা রাস্তা বন্ধ করে দেন।
জানা গেছে, উচ্ছেদ হওয়া অনেক মানুষই করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে চাকরি হারিয়েছেন এবং তাদের পক্ষে নতুন করে ঘর ভাড়া করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে, উচ্ছেদ অভিযান বন্ধের জন্য কয়েকজন বাস্তুহারা এবং তাদের সহযোগী একটি আইনি লড়াই শুরু করেছিলেন। কিন্তু আদালত তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন।
বিচারক মাইকেল ম্যাকশেন তার রায়ে বলেছেন, “প্রাকৃতিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার, ভয়াবহ দাবানল প্রতিরোধ এবং ডেসচুটস ন্যাশনাল ফরেস্টের সামগ্রিক স্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে এই এলাকার প্রায় ১৫০ জন মানুষের বসবাস করার অধিকারের চেয়ে জনসাধারণের বৃহত্তর স্বার্থ অনেক বেশি।”
বন বিভাগের মুখপাত্র ক্যাটলিন ওয়েব জানিয়েছেন, তারা ‘স্বেচ্ছায় সম্মতি’র ওপর জোর দিচ্ছেন। তবে বন বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মীরা নিয়মিত টহল দেবেন এবং এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন।
আইন অমান্যকারীদের ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং ৫,০০০ ডলার (প্রায় ৫ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা) পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন