শিরোনাম: খিচুড়ির দেশ থেকে আসা একটি ক্লাসিক: কীভাবে কেডগির জন্ম হলো, যা এখনো ব্রিটিশদের প্রিয় নাস্তার তালিকায়
শত শত বছর আগে, ভারতের মাটিতে জন্ম নেওয়া একটি সাধারণ খাবার, খিচুড়ি, সময়ের সাথে সাথে ভিন্ন রূপ নিয়ে আজও ব্রিটেনের মানুষের খাদ্যতালিকায় রাজত্ব করছে। এই খাবারটিই হলো কেডগি, যা মূলত চাল, মাছ এবং ডিম দিয়ে তৈরি একটি সুস্বাদু প্রাতরাশের পদ।
এই গল্পটি শুধু একটি খাবারের নয়, বরং সংস্কৃতি আর ইতিহাসের এক দারুণ মিশ্রণ।
প্রাচীন ভারতে, খিচুড়ি ছিল খুবই পরিচিত একটি খাবার। এটি চাল এবং ডাল মিশিয়ে তৈরি করা হতো, যা ছিল স্বাস্থ্যকর এবং সহজে হজমযোগ্য।
এমনকি, মহাভারতের মতো প্রাচীন ভারতীয় মহাকাব্যেও এই খাবারের উল্লেখ পাওয়া যায়। সময়ের সাথে সাথে, খিচুড়ি শুধু একটি সাধারণ খাবার হিসেবেই পরিচিত থাকেনি, বরং এটি উৎসব ও আনন্দের একটি অংশ হয়ে উঠেছিল।
১৭শ ও ১৮শ শতকে, যখন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ব্যবসা করতে আসে, তখন তাদের হাত ধরেই এই খিচুড়ি পৌঁছে যায় ইংল্যান্ডে।
কোম্পানির কর্মচারীরা প্রথমে স্থানীয় খাবার খেতেই অভ্যস্ত ছিলেন। এমনকি, অনেকে তাঁদের নিজেদের দেশের খাবারের চেয়ে এই ভারতীয় খাবারগুলো বেশি পছন্দ করতেন।
এই সময়েই খিচুড়ি, ইংরেজদের খাদ্য তালিকায় জায়গা করে নেয়।
ইতিহাসবিদদের মতে, খিচুড়ি থেকে কেডগির জন্ম কীভাবে হলো, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে ধারণা করা হয়, এটি ধীরে ধীরে বিবর্তিত হয়েছে।
সম্ভবত, সকালে পরিবেশন করার জন্য খিচুড়িকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে ডিম ও মাছ যোগ করা হয়েছিল। ধীরে ধীরে, ডাল বাদ দিয়ে, এই খাবারে যোগ হয় আরও কিছু উপাদান।
একসময় এটি ‘কিডগিরি’ এবং পরে ‘কেডগি’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
ব্রিটিশরা যখন ভারত থেকে ফিরতে শুরু করে, তখন তাঁদের সাথে করে নিয়ে আসে ‘কারি’-র স্বাদ, যা ছিল ভারতীয় রান্নার একটি সাধারণ শব্দ। ১৭৮০-এর দশকে কারি পাউডার বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হতে শুরু করে।
এর কিছুকাল পরেই, স্কটিশ মহিলা স্টেফানা ম্যালকম একটি ডায়েরিতে কেডগির রেসিপি লিখে রাখেন। তাঁর ভাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন, ফলে তিনি এই রান্নার সাথে পরিচিত হয়েছিলেন।
ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময়, তাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আসে। সৈন্যদের জন্য সাধারণ ভারতীয় খাবার থাকলেও, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের জন্য তৈরি হতো আরও আড়ম্বরপূর্ণ ভোজন, যেখানে কেডগির মতো খাবার পরিবেশন করা হতো।
ভিক্টোরিয়ান যুগে, কেডগি ব্রিটেনের অভিজাত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ১৮৩০-এর দশকে, প্রাতরাশ আরও বিস্তৃত হয়ে ওঠে, এবং কেডগির মতো বিশেষ পদগুলি এতে যুক্ত হয়।
এমনকি, ১৮৬১ সালে, রান্নার বইতে রান্নার প্রধান চার্লস এলমে ফ্রাঙ্কাটেলি ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্য কেডগির একটি রেসিপি তৈরি করেন।
রেলপথের উন্নতির কারণে, উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে ধূমায়িত মাছের সরবরাহ সহজ হয়ে যায়। স্কটিশ ধূমায়িত মাছ অভিজাতদের মধ্যে পরিচিত ছিল, এবং এই সময়ে কিপার (ধূমায়িত হেরিং) এবং ফিনান হ্যাডি (ধূমায়িত হ্যাডক) বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এই মাছগুলো কেডগিতে ব্যবহার করা হতো, যা খাবারটিকে আরও সুস্বাদু করে তুলেছিল।
বর্তমানে, কেডগি বিভিন্ন রেস্তোরাঁ এবং বাড়িতে বিভিন্ন রূপে পরিবেশিত হয়। ক্লাসিক সংস্করণটি সাধারণত হালকা হয়, যেখানে ডিম সেদ্ধ করে ব্যবহার করা হয়।
আবার, কিছু রেসিপিতে ক্রিম এবং লেবুর ব্যবহার দেখা যায়। এই খাবারটি আজও ব্রিটিশদের কাছে খুবই প্রিয়, যা ভারতীয় সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক