মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজার নিয়ে প্রকাশিত নতুন তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল মাসে দেশটির কর্মসংস্থান উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। মার্কিন ব্যুরো অফ লেবার স্ট্যাটিস্টিক্স (Bureau of Labor Statistics) -এর দেওয়া তথ্য অনুসারে, এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছে, যা আগের মাসের তুলনায় বেশ কম।
মার্চ মাসে এই সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ২৮ হাজার। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
শুক্রবার প্রকাশিত এই রিপোর্টে দেখা গেছে, এপ্রিল মাসে বেকারত্বের হার ছিল ৪.২ শতাংশ। যদিও বেকারত্বের হারে তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি, তবে নতুন চাকরির সুযোগ কমে যাওয়াটা উদ্বেগের কারণ।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ, শুল্ক বৃদ্ধি এবং ফেডারেল ব্যয়ের কাটছাঁটের মতো বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে। নেভি ফেডারেল ক্রেডিট ইউনিয়নের কর্পোরেট অর্থনীতিবিদ রবার্ট ফ্রিক সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আসুন, আমরা নিজেদেরকে বোকা না বানাই। সম্ভবত গ্রীষ্মের শেষ দিকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো দেশটির ভোক্তারা, যাদের ব্যয়ের ওপর অর্থনীতির দুই-তৃতীয়াংশ নির্ভর করে। শ্রমবাজার এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
তবে, বর্তমানে এমন একটি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে এই গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছেন, ডেটা অনুযায়ী অর্থনীতি এখনো শক্তিশালী দেখাচ্ছে, চাকরির বৃদ্ধি অব্যাহত আছে এবং বেকারত্বের হারও স্থিতিশীল। কিন্তু এর ভেতরের ঝুঁকিগুলো বাড়ছে।
বিশেষ করে, শুল্ক বৃদ্ধি এবং অভিবাসন সংক্রান্ত নীতিমালার কারণে ব্যবসার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা বাড়ছে।
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে ১৪৫ শতাংশে নিয়ে যায়। এছাড়াও, সব ধরনের আমদানি পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
গাড়ির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য নতুন উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
অন্যদিকে, সরকারি ব্যয় কমানো এবং অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপগুলোও অব্যাহত রয়েছে। শ্রমবাজারের অস্থিরতার কারণে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কর্মী ছাঁটাই করতে শুরু করেছে।
এপ্রিল মাসে ইউপিএস (UPS) এবং ইন্টেল (Intel) -এর মতো বড় কোম্পানিগুলো কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে, যা সামগ্রিক পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে শ্রমবাজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিশেষভাবে নজরে রাখতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যসেবা, রাজ্য ও স্থানীয় সরকার এবং বিনোদন ও আতিথেয়তা খাত।
এই তিনটি খাত সাধারণত কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে, সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং ভোক্তাদের মধ্যে ব্যয়ের প্রবণতা কমে যাওয়ার কারণে এই খাতেও ধীরগতি দেখা যেতে পারে।
এছাড়াও, কর্মীদের কাজের ঘণ্টার পরিমাণ এবং মজুরি বৃদ্ধির হারও গুরুত্বপূর্ণ। কাজের ঘণ্টা কমলে বা মজুরি বৃদ্ধি কমে গেলে তা অর্থনীতির জন্য সতর্কবার্তা হতে পারে।
এই অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সরাসরি প্রভাব বাংলাদেশে কতটা পড়বে, তা এখনই বলা কঠিন।
তবে, বিশ্ব অর্থনীতির এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য, রেমিট্যান্স এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কিছু প্রভাব পড়তে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন