ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে উত্তেজনা, দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি ও পাল্টা হামলা।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতকে ‘যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। এরপর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে কাশ্মীর সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, যা গত দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ।

বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জরুরি নিরাপত্তা বৈঠক ডেকেছেন। এরই মধ্যে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ইসলামাবাদ এর সমুচিত জবাব দেবে এবং সামরিক অভিযান চলছে।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ভারত ‘অপারেশন সিন্দুর’-এর অংশ হিসেবে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছে।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারাও ভারতীয় সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে এবং কয়েকটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। এতে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে।

পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্ফরাবাদের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভারতীয় বিমান হামলার কারণে তারা ঘরবাড়ি ছেড়ে পাহাড়ের দিকে পালিয়ে গেছেন।

শহরের ৪০ বছর বয়সী বাসিন্দা মোহাম্মদ শায়ের মীর রয়টার্সকে জানান, “পুরো বাড়ি কেঁপে উঠেছিল। সবাই ভয় পেয়ে যায়, আমরা সবাই বাচ্চাদের নিয়ে পাহাড়ের দিকে চলে যাই।”

ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিসরি বুধবার জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে ভারতের বিরুদ্ধে আরও হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। তাই আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।

ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ভারতীয় সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে, যেখানে অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো অবস্থিত ছিল।

তবে তারা জানিয়েছে, তাদের পদক্ষেপগুলো ছিল সুনির্দিষ্ট ও নিয়ন্ত্রিত। তারা কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনায় আঘাত হানে নি।

পাকিস্তানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় পাঞ্জাবের বাহাওয়ালপুরে একটি মসজিদে আঘাত হানে, যাতে এক শিশু নিহত ও আরও দুজন আহত হয়েছে।

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আরও দাবি করেছে যে হামলায় নিহত ও আহতদের মধ্যে চারজন শিশুসহ বহু বেসামরিক নাগরিকও রয়েছে।

পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাল্টা জবাব দিয়েছে এবং তারা ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে, যার মধ্যে সুখোই ও মিগ-এর মতো যুদ্ধবিমানও ছিল।

তবে, পাকিস্তান বিমান বাহিনী জানিয়েছে, তাদের যুদ্ধবিমানগুলো ভারতীয় আকাশসীমা লঙ্ঘন করেনি এবং তাদের সব বিমান নিরাপদে ঘাঁটিতে ফিরে এসেছে।

আল জাজিরার সাংবাদিক কামাল হায়দার ইসলামাবাদ থেকে জানিয়েছেন, ভারতীয় হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানের বিমান বাহিনী পাল্টা অভিযান শুরু করেছে। তিনি আরও জানান, কাশ্মীর সীমান্তেও ব্যাপক গোলাগুলি চলছে।

পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার আল জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের বিরুদ্ধে ‘উস্কানিমূলক ও ভিত্তিহীন’ হামলার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ভারত কাশ্মীরে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে এবং ইসলামাবাদের উচিত বিশ্বকে এ বিষয়ে সতর্ক করা।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র বলেন, বিশ্ব ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাত চায় না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সংঘর্ষকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং দ্রুত এর সমাধানের আশা প্রকাশ করেছেন।

চীনের পক্ষ থেকে উভয় দেশকে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে। যুক্তরাজ্যও দুই দেশকে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা