নতুন পোপ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে কার্ডিনালদের গোপন বৈঠক: বিশ্বের ১.৪ বিলিয়ন ক্যাথলিকের ভবিষ্যৎ
ভ্যাটিকান সিটি থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, রোমান ক্যাথলিক চার্চের নতুন প্রধান নির্বাচিত করার জন্য প্রস্তুতি প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর পর, তাঁর উত্তরসূরি নির্বাচনের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কার্ডিনালরা গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছেন।
এই গুরু দায়িত্ব পালনের জন্য ১৩৩ জন কার্ডিনালকে বেছে নেওয়া হয়েছে, যাঁদের বয়স ৮০ বছরের নিচে।
আগামী বুধবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ৩০ মিনিটে) সিস্টিন চ্যাপেলে বিশেষ অধিবেশন বসবে, যেখানে গোপন ভোটের মাধ্যমে নতুন পোপ নির্বাচিত করা হবে।
এই নির্বাচনের প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ভ্যাটিকান বিশেষজ্ঞ মার্কো পলিটি জানান, এবারের নির্বাচনে একটি নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ক্যাথলিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা তাঁদের মতামত জানাতে আগ্রহী।
তাঁদের কথা শোনা এবং সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
পোপ ফ্রান্সিস এই পরিবর্তনের সূচনা করেছিলেন, তিনি তাঁর সময়ে চার্চেরGlobal reach আরও বাড়ানোর জন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে কার্ডিনাল নিয়োগ করেছিলেন।
জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রধান বিষয়গুলি হল: চার্চের ঐক্য বজায় রাখা, বিশ্ব রাজনীতিতে চার্চের অবস্থান, চীনের সঙ্গে সম্পর্ক, অন্যান্য ধর্মের প্রতি চার্চের দৃষ্টিভঙ্গি, যাজকদের সংকট এবং যৌন নির্যাতন ও আর্থিক কেলেঙ্কারির মতো বিষয়গুলি।
নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য প্রার্থীদের (papabile) নিয়ে জল্পনা চলছে।
তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কার্ডিনাল পিট্রো পারোলিন।
তিনি একজন দক্ষ কূটনীতিক হিসাবে পরিচিত এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান রয়েছে।
এছাড়াও, কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও ট্যাগলের নামও শোনা যাচ্ছে, যিনি ‘এশিয়ার ফ্রান্সিস’ নামে পরিচিত।
তবে, কে হবেন নতুন পোপ, তা বলা কঠিন।
কারণ, ইতিহাসে দেখা গেছে, পোপ নির্বাচনের প্রক্রিয়া খুবই অপ্রত্যাশিত।
নির্বাচনের সময় গুজব এবং মিথ্যা তথ্যের প্রভাব থাকতে পারে, যা প্রার্থীদের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সিস্টিন চ্যাপেলে ভোটের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর বাইরের জগৎ থেকে কার্ডিনালদের সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।
নতুন পোপ নির্বাচনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ কমপক্ষে ৮৯ জন কার্ডিনালের সমর্থন পেতে হবে।
যদি প্রথম রাউন্ডে কোনো ফল না হয়, তবে প্রতিদিন আরও চারটি করে ভোট গ্রহণ করা হবে।
নির্বাচনের প্রক্রিয়া কত দিন চলবে, তার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, তবে কার্ডিনালদের বয়স এবং অতীতের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ধারণা করা হচ্ছে, এটি পাঁচ দিনের বেশি নাও চলতে পারে।
সারা বিশ্বের মানুষ এখন সিস্টিন চ্যাপেলের চিমনির দিকে তাকিয়ে আছে।
নতুন পোপ নির্বাচিত হলে সাদা ধোঁয়া দেখা যাবে, আর নির্বাচিত না হলে কালো ধোঁয়া।
নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের বারান্দা থেকে ঘোষণা করবেন, “Habemus papam!” অর্থাৎ, “আমরা একজন পোপ পেয়েছি।”
এরপর তিনি বিশ্ববাসীর সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা