দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাপোসা আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ‘পুনর্গঠন’-এর লক্ষ্যে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে বলে প্রিটোরিয়া সূত্রে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের শরণার্থী হিসেবে গ্রহণ করার ঘোষণার পরই এই বৈঠকের খবর আসে।
আফ্রিকার দেশটিতে শ্বেতাঙ্গ কৃষকদের ওপর ‘গণহত্যা’ চালানোর অভিযোগ তুলেছিলেন ট্রাম্প, যা ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। রামাপোসার এই সফরটি সোমবার থেকে শুরু হয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে এবং দুই নেতার মধ্যে বৈঠকটি বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে রামাপোসার এই বৈঠকটি হতে যাচ্ছে এমন এক সময়ে, যখন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। ট্রাম্প এর আগে রামাপোসার সরকারের বিভিন্ন নীতির সমালোচনা করেছেন।
তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ভূমি সংস্কার নীতি এবং আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (International Court of Justice – ICJ) যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা মামলার বিরোধিতা করে দেশটির জন্য মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেন।
আফ্রিকানদের মধ্যে যারা শ্বেতাঙ্গ, তাদের ওপর নিপীড়ন ও হত্যার অভিযোগ তুলে তাদের পুনর্বাসনের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। যদিও বিশেষজ্ঞরা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
আফ্রিকানরা মূলত ডাচ ঔপনিবেশিকদের বংশধর, যারা প্রায় পাঁচ দশক ধরে বর্ণবাদী শাসনের নেতৃত্ব দিয়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার শ্বেতাঙ্গদের ওপর কোনো ধরনের নিপীড়নের প্রমাণ নেই বলে দাবি করেছে।
প্রেসিডেন্ট রামাপোসা বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার ভুল তথ্য দিচ্ছে, কারণ দক্ষিণ আফ্রিকা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সহিংস অপরাধের সমস্যা মোকাবেলা করছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার ‘আফফারমেটিভ অ্যাকশন’ আইন, যা কৃষ্ণাঙ্গ জনগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ তৈরি করে। বর্ণবাদের সময় তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিল।
নতুন ভূমি পুনরুদ্ধার আইনে সরকার বিশেষ পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই জনস্বার্থে জমি নিতে পারবে। যদিও প্রিটোরিয়া বলছে, এটি জমি দখলের হাতিয়ার নয়, বরং অব্যবহৃত জমি জনকল্যাণে পুনর্বণ্টনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকার জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ এবং তাদের হাতে দেশের ৭০ শতাংশের বেশি জমির মালিকানা রয়েছে। তাছাড়াও, শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পদেও তাদের আধিপত্য রয়েছে।
প্রেসিডেন্ট রামাপোসা কূটনৈতিকভাবে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা করতে এবং দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে আগ্রহী। বাণিজ্যিকভাবে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের পরেই দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম অংশীদার।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা