খরচ বাড়ছে, গরমের দিনে স্বস্তি নেই: গ্রীষ্মে ঘর ঠান্ডা রাখতে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ খরচ হতে পারে।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গ্রীষ্মকালে বাড়ছে তাপমাত্রা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের চাহিদা এবং সেই কারণে বাড়ছে বিদ্যুতের দাম।
ফলে গরমে ঘর ঠান্ডা রাখার খরচও বাড়ছে, যা বিভিন্ন দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় নতুন করে চাপ সৃষ্টি করছে। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রীষ্মকালে ঘর ঠান্ডা রাখার খরচ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে, যা এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
গবেষণা অনুযায়ী, গ্রীষ্মকালে অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত, মার্কিন নাগরিকদের ঘর ঠান্ডা রাখতে গড়ে ৭৮৪ মার্কিন ডলার খরচ হতে পারে।
গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি প্রায় ৪.২ শতাংশ বেশি। এমনকি, ২০২০ সালের তুলনায় এই খরচ ১৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনা করলে, এই হিসাব আরও উদ্বেগজনক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদ্যুতের দাম দ্রুত গতিতে বাড়ছে এবং গরমও বাড়ছে, যার কারণে এই খরচ বাড়ছে।
নিউ ইংল্যান্ড এবং মধ্য-পশ্চিম অঞ্চলের বাসিন্দাদের ওপর এই খরচের চাপ তুলনামূলকভাবে বেশি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর রয়েছে, যেখানে খরচ সামান্য কমতে পারে।
বর্তমানে, অনেক আমেরিকান পরিবারে ঋণের বোঝা বাড়ছে, যা তাদের জন্য উদ্বেগের কারণ।
শীতকালে ঘর গরম রাখার খরচও বেড়েছে, যা বছরের শুরুতেই তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, গরমকালে ঘর ঠান্ডা রাখার অতিরিক্ত খরচ তাদের জীবনযাত্রায় আরও বেশি সমস্যা তৈরি করবে।
আর্দ্রতা এবং অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ নেই।
বিশেষ করে যাদের আর্থিক অবস্থা দুর্বল, তাদের জন্য এসি (air conditioning) চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
এর ফলে হিটস্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
২০২০ সালের গ্রীষ্মকালে যেখানে প্রায় ১,২০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, সেখানে ২০২৩ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ২,৩০০ এর বেশি হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সরকারি সহায়তা কর্মসূচি (LIHEAP) রয়েছে, যা দরিদ্র পরিবারগুলোকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে সাহায্য করে।
কিন্তু বর্তমানে এই কর্মসূচির তহবিল পর্যাপ্ত নয়।
ফলে অনেক পরিবার এই সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্যে গরিব মানুষের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ক্ষেত্রে সুরক্ষা বিষয়ক পর্যাপ্ত নীতি নেই, যা পরিস্থিতিকে আরও কঠিন করে তুলছে।
যদিও এই হিসাব আমেরিকার, তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এখন বিশ্বজুড়ে দৃশ্যমান।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গরমকালে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে, ফলে বিদ্যুতের দাম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য এটি একটি উদ্বেগের বিষয়।
সরকারি সহায়তা এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের মাধ্যমে এই ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করা যেতে পারে।
সবশেষে, এটি পরিষ্কার যে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশ্বজুড়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
একইসঙ্গে, দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন, যাতে তারা গরমের সময় স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন