যুদ্ধফেরত সৈনিকদের স্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণা: হার্ভার্ডের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের চিন্তাভাবনা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স বিভাগ (Department of Veterans Affairs) দেশটির প্রাক্তন সৈনিকদের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রমের জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে করা চুক্তিগুলো বাতিল করার কথা ভাবছে। জানা গেছে, এই সিদ্ধান্তের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হতে পারে আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক গবেষণা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সৈনিকদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৬,৪০০ জনের বেশি অভিজ্ঞ সৈনিক আত্মহত্যা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে, হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ড. রোনাল্ড কেসলারের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণা প্রকল্প বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আত্মহত্যার ঝুঁকিতে থাকা সৈনিকদের চিহ্নিত করা এবং তাদের জন্য জরুরি সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করা হয়। খবর অনুযায়ী, চুক্তি বাতিল করা হলে এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এই বিভাগের অভ্যন্তরীণ সূত্রগুলো বলছে, শুধু আত্মহত্যা বিষয়ক গবেষণা নয়, ক্যান্সার চিকিৎসা সংক্রান্ত আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি বাতিলের পরিকল্পনা চলছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রোস্টেট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের মতো বিষয়গুলো। প্রতি বছর, কয়েক লক্ষ প্রবীণ সৈনিক ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স বিভাগ অথবা তাদের অনুমোদিত ক্লিনিকে ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য যান। চুক্তি বাতিল হলে, তাদের স্বাস্থ্যসেবার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
এই চুক্তি বাতিলের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ সাশ্রয়ের চেষ্টা। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সরকারি ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নিতে চাইছে। এছাড়াও, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রশাসনের কিছু বিষয়ে মতবিরোধ রয়েছে, যা চুক্তি বাতিলের একটি কারণ হতে পারে।
তবে, ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স বিভাগের কর্মকর্তাদের মধ্যে এই চুক্তিগুলো বাতিলের বিষয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। অনেকে মনে করছেন, চুক্তি বাতিল করা হলে তা সৈনিকদের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ক্ষতি ডেকে আনবে। বিশেষ করে, যারা মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য সহায়তা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ড. ন্যান্সি কেটিং এক বিবৃতিতে বলেছেন, “সৈনিকদের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফেডারেল সরকারের আর্থিক সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। ক্যান্সার, পরিবেশগত প্রভাব, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মহত্যার ঝুঁকি—এসব ক্ষেত্রে গবেষণা চালিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। এই গবেষণাগুলো আমাদের সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে।”
বর্তমানে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ভেটেরান্স অ্যাফেয়ার্স বিভাগের চুক্তিগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে, এখনো পর্যন্ত সব চুক্তি বাতিল করা হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত নয়।
এই বিষয়টি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশেও সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন সদস্যদের স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে তাদের জন্য উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে, স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণায় আরও বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, যাতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা যায়।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।