যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের পেছনে মূল কারণ ছিলেন কম রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ভোটাররা। নতুন এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে, সাধারণত ডেমোক্রেটদের সমর্থনকারী বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে এবারের নির্বাচনে সমর্থন কমেছে।
এই দলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তরুণ ভোটার, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটার এবং শহরের ভোটাররা।
ডেমোক্রেট-পন্থী ডেটা সংস্থা ক্যাটালিস্টের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যারা নিয়মিত ভোট দেন, ট্রাম্পের আমলে তাদের মধ্যে ডেমোক্রেটদের সমর্থন বাড়ছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রায় অর্ধেক ভোটার ছিলেন এমন, যারা আগের চারটি ফেডারেল নির্বাচনেই ভোট দিয়েছেন।
এই গোষ্ঠীর ভোটার সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় ৯ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি ছিল। নিয়মিত ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ সমর্থন পেয়েছেন কমলা হ্যারিস, যিনি ২০২০ সালের ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন এবং ২০১৬ সালের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে ভালো ফল করেছেন।
তবে, কম নিয়মিত ভোট দেন এমন ভোটারদের মধ্যে ডেমোক্রেটদের প্রতি সমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। হিলারি ক্লিনটন এবং বাইডেন উভয়েই তাদের আগের চারটি নির্বাচনের মধ্যে দুটি বা তার কম নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন এমন ভোটারদের ৫৪ শতাংশের বেশি সমর্থন পেয়েছিলেন।
সেখানে হ্যারিস এই ধরনের ভোটারদের মধ্যে মাত্র ৪৮ শতাংশের সমর্থন পেয়েছেন। এমনকি, যারা ২০২০ সালে ভোট দেননি, কিন্তু ২০২৪ সালে দিয়েছেন, তাদের অর্ধেকেরও কম ভোট পেয়েছেন হ্যারিস। যেখানে বাইডেন ও ক্লিনটন তাদের নির্বাচনে এমন নতুন ভোটারদের মধ্যে প্রায় ৫৫ শতাংশ সমর্থন পেয়েছিলেন।
কম নিয়মিত ভোট দেওয়া এই ভোটারদের অধিকাংশই সাধারণত ডেমোক্রেটদের সমর্থন করেন। তাদের মধ্যে তরুণ, শ্বেতাঙ্গ নন এমন এবং শহরের মানুষের সংখ্যা বেশি।
তবে তাদের মধ্যে কলেজ ডিগ্রিধারীর সংখ্যাও তুলনামূলকভাবে কম, যা রিপাবলিকানদের সমর্থনের সঙ্গে সম্পর্কিত। ২০২৪ সালের নির্বাচনে এই দলগুলোর সবাই ডেমোক্রেট প্রার্থীর থেকে দূরে সরে গেছেন।
প্রতিবেদনের লেখকদের মতে, “নির্বাচনের গতিপ্রকৃতির জন্য কোনো একক বৈশিষ্ট্য দায়ী নয়। বরং আমরা দেখেছি, এটি সংশ্লিষ্ট কারণগুলোর একটি সম্মিলিত ফল।”
ক্যাটালিস্ট একটি ডেটা সংস্থা, যারা ভোটার তালিকা তৈরি করে এবং ডেমোক্রেট, শিক্ষাবিদ ও অলাভজনক সংস্থাগুলোকে ডেটা সরবরাহ করে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাওয়া ভোটার তালিকা এবং প্রচারণার ডেটা ব্যবহার করে এই বিশ্লেষণ তৈরি করা হয়েছে।
এর মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফল এবং ভোট দেওয়ার ধরন সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, যা কিছু জরিপের চেয়ে বেশি নির্ভরযোগ্য, কারণ এখানে ভোটারদের আগের নির্বাচনের ভোট মনে রাখার ওপর নির্ভর করতে হয় না।
ক্যাটালিস্টের ফলাফল ২০২৪ সালের ভোটের হিসাবের সঙ্গে মিলে যায়, যা ভোটারদের জনমিতিক কাঠামো এবং গুরুত্বপূর্ণ দলগুলোর ভোট দেওয়ার ধরন সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই বিশ্লেষণ ভোটের হার সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য দেয় এবং জরিপের চেয়ে নতুন ও অনিয়মিত ভোটারদের সম্পর্কে আরও সুনির্দিষ্ট ধারণা দেয়।
অনেক জায়গায় নির্বাচন কর্মকর্তারা ভোটারদের চূড়ান্ত ভোট দেওয়ার হিসাব প্রকাশ করতে কয়েক মাস সময় নেন। ফলে, এটি ২০২৪ সালের ভোটার তালিকা থেকে পাওয়া প্রথম প্রধান দেশব্যাপী বিশ্লেষণ।
ক্যাটালিস্টের হিসাব অনুযায়ী, লিঙ্গগত পার্থক্যের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়েছে। বিভিন্ন জাতি ও বর্ণের পুরুষদের মধ্যে ডেমোক্রেটদের সমর্থন কমেছে।
বিশেষ করে তরুণ এবং ল্যাটিনো পুরুষদের মধ্যে এই প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। এছাড়াও, দেশের সবচেয়ে বেশি শহরগুলোতে ডেমোক্রেটদের সমর্থন আগের চারটি নির্বাচনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
প্রতিবেদনে প্রতিটি উপ-গোষ্ঠীর মধ্যে ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকানদের ভোটের হিসাব দেখানো হয়েছে, যেখানে তৃতীয় দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোট বিবেচনা করা হয়নি।
এই হিসাব অনুযায়ী, ল্যাটিনো ভোটারদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন বাইডেনের চেয়ে ৯ শতাংশ কমেছে, ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ৬ শতাংশ, পুরুষদের মধ্যে ৫ শতাংশ এবং যারা নিয়মিত ভোট দেন না তাদের মধ্যে ৫ শতাংশ কমেছে।
এই উপ-গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ব্যাপক মিল রয়েছে এবং এদের সম্মিলিত সমর্থন ডেমোক্রেটদের জন্য উদ্বেগের কারণ। উদাহরণস্বরূপ, ৩০ বছরের কম বয়সী ল্যাটিনো ভোটারদের মধ্যে হ্যারিসের সমর্থন বাইডেন ও ক্লিনটনের চেয়ে যথাক্রমে ১২ ও ১৯ শতাংশ কমেছে।
হ্যারিসের প্রতি সমর্থন কমার এই প্রবণতা আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠীর মধ্যেও দেখা গেছে। শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের মধ্যে ডেমোক্রেটদের সমর্থন ধরে রাখলেও, ল্যাটিনা নারী এবং এশীয়-আমেরিকান ও প্যাসিফিক আইল্যান্ডার নারীদের মধ্যে সমর্থন কমেছে।
৬৫ বছরের কম বয়সী সব ভোটারের মধ্যে তার সমর্থন বাইডেন বা ক্লিনটনের চেয়ে সামান্য কম ছিল। তবে প্রবীণদের মধ্যে ক্লিনটনের চেয়ে সামান্য বেশি সমর্থন পেয়েছেন তিনি।
তবে, ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণের ১০০ দিনের মধ্যে করা জরিপে দেখা গেছে, তিনি এই দলগুলোর মধ্যে নতুন সমর্থন ধরে রাখতে পারেননি। নিয়মিত ভোটারদের মধ্যে ডেমোক্রেটদের সমর্থন বৃদ্ধি এবং সমর্থন কমে যাওয়ার এই প্রবণতা আসন্ন গভর্নর ও কংগ্রেস নির্বাচনে রিপাবলিকানদের ফলাফলে প্রভাব ফেলতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন