মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতিদের মধ্যে মতানৈক্য বাড়ছে, যা তাদের বিভিন্ন রায়ে প্রতিফলিত হচ্ছে। বিচারকদের এই ভিন্নমতগুলো নজরে আসার কারণ হলো, গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলার রায় ঘোষণার প্রাক্কালে তারা নিজেদের রাজনৈতিক ও নীতিগত অবস্থান তুলে ধরছেন। এই প্রবণতা বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, যা বাংলাদেশের মতো গণতান্ত্রিক দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হতে পারে।
সম্প্রতি, বিচারপতি ব্রেট কাভানা পরিবেশ বিষয়ক একটি মামলার রায়ে সরকারের ‘বারংবার বিলম্ব’ এবং এর ফলস্বরূপ অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর বিরূপ প্রভাব নিয়ে মন্তব্য করেন। এরপর বিচারপতি ক্ল্যারেন্স থমাস একটি মামলার রায়ে ‘বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ (DEI) কার্যক্রম নিয়ে নিজস্ব মতামত দেন, যা বিচারপতিদের মধ্যে বিভেদ আরও স্পষ্ট করে তোলে। এই ধরনের মন্তব্যগুলো সাধারণত রাজনৈতিক আলোচনা থেকে আসে, যা বিচারকদের নিরপেক্ষতার ধারণার পরিপন্থী।
অন্যদিকে, বিচারপতি কেটানজি ব্রাউন জ্যাকসন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়কালে বিচারকদের কার্যক্রমের সমালোচনা করেন। তিনি নিম্ন আদালতের বিচারকদের কাজের প্রশংসা করলেও, সুপ্রিম কোর্টের সংখ্যাগরিষ্ঠদের দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতাকে ইঙ্গিত করেন।
এই বিভাজনগুলো এমন এক সময়ে বাড়ছে, যখন আদালত গুরুত্বপূর্ণ কিছু মামলার রায় দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, রূপান্তরকামী (transgender) তরুণদের চিকিৎসা বিষয়ক রাজ্যের নিষেধাজ্ঞা, এবং শিশুদের এলজিবিটিকিউ-বিষয়ক শিক্ষা থেকে অভিভাবকদের বিরত রাখার অধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলো। এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসনের জন্মগত নাগরিকত্ব বাতিল করার প্রচেষ্টা নিয়েও আলোচনা চলছে।
আদালতে বিচারাধীন ট্রাম্পের সময়কার কিছু মামলার কারণেও এই বিভেদ বাড়ছে। সাবেক প্রেসিডেন্টের নির্দেশে কিছু স্বাধীন সংস্থার প্রধানদের অপসারণের বিষয়টিও এর মধ্যে অন্যতম। ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়টিও এই বিতর্কের সঙ্গে জড়িত। যদি ট্রাম্প এই সংস্থাগুলোর প্রধানদের অপসারণ করতে পারতেন, তাহলে ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েলকেও অপসারণ করার সম্ভাবনা তৈরি হতো, যা বাজারের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হতে পারত।
প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস এই মামলার শুনানিতে নেতৃত্ব দেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতের ভিত্তিতে একটি সিদ্ধান্ত হয়, যা ফেডারেল রিজার্ভকে এই বিতর্কের বাইরে রাখে। বিচারপতি ক্যাগানের মতে, আদালতের এই পদক্ষেপ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে নেওয়া হয়েছে। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠদের এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, এটি ‘দিনের রাজনৈতিক পরিস্থিতির’ প্রতিফলন।
মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে মতপার্থক্যের এই দৃশ্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং রাজনৈতিক প্রভাবের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে একটি স্বাধীন বিচার বিভাগ গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ, সেখানে এই ধরনের ঘটনা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং নিরপেক্ষতা একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।