যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার পরিচালনার ধরন নিয়ে প্রায়ই বিতর্ক দেখা যায়। তাঁর কিছু নীতি এমন যা পরস্পরবিরোধী বলে মনে হয়।
একদিকে তিনি ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা কমাতে চান, অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে চান। এই দ্বিধাবিভক্ত নীতির কারণে অনেক সময় জটিলতা সৃষ্টি হয়।
ট্রাম্প প্রায়ই বলে থাকেন যে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় রাজ্য সরকারগুলোর আরও বেশি দায়িত্ব নেওয়া উচিত। ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সি (FEMA)-এর কার্যক্রম সীমিত করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
তাঁর মতে, ঘূর্ণিঝড়, দাবানল বা ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগের মোকাবিলার কাজটি রাজ্য সরকারগুলোরই করা উচিত। এমনকি, কোনো রাজ্যের গভর্নর যদি পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারেন, তবে তাঁর সেই পদে থাকারও যোগ্যতা নেই বলে মনে করেন ট্রাম্প।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসামের আপত্তি সত্ত্বেও ট্রাম্প সেখানকার ন্যাশনাল গার্ডকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন। এরপর সৈন্যদেরকে লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় নামানো হয়।
স্থানীয় এবং রাজ্য পর্যায়ের নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে অগণতান্ত্রিক এবং ক্ষমতার অপব্যবহার হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মতে, এর ফলে অস্থিরতা আরও বেড়েছে, যা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
শুধু তাই নয়, ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবেশ নীতিতেও হস্তক্ষেপ করতে চান। অঙ্গরাজ্যটিতে ২০৩৫ সাল থেকে নতুন গ্যাস-চালিত গাড়ির বিক্রি নিষিদ্ধ করার যে পরিকল্পনা রয়েছে, সেটির বিরোধিতা করছেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ফেডারেল সরকারের দুর্বল ভূমিকার কারণে ক্যালিফোর্নিয়া নিজস্ব নীতি গ্রহণ করেছে। ট্রাম্প আগে ডেমোক্র্যাটদের নেওয়া জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক পদক্ষেপগুলোও বাতিল করতে চান।
শিক্ষাখাতেও ট্রাম্পের একই ধরনের নীতি দেখা যায়। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিলুপ্তি চান, যাতে শিক্ষা বিষয়ক ক্ষমতা রাজ্যগুলোর হাতে ফিরিয়ে দেওয়া যায়।
একই সময়ে, বিভিন্ন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বৈচিত্র্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরির পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন তিনি। সংখ্যালঘু এবং ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সুযোগ দেওয়ার বদলে, তিনি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ট্রান্সজেন্ডার নারীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি বড় একটি নাগরিক অধিকারের বিষয় হিসেবে তুলে ধরেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে গভর্নর এবং প্রেসিডেন্টের মধ্যে প্রায়ই মতবিরোধ দেখা যায়। ট্রাম্প এবং নিউসামের মধ্যেকার বিরোধও তেমন একটি উদাহরণ।
টেক্সাসের রিপাবলিকান গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট, ফেডারেল সরকার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছিলেন। তবে, বাইডেন প্রশাসন অ্যাবটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন রাজ্য সরকারগুলোকে অভিবাসন বিষয়ক ফেডারেল কর্মকর্তাদের কাজে বাধা না দেওয়ার জন্য সতর্ক করেছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও ট্রাম্পের নীতিতে পরিবর্তন দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, আরকানসাসের গভর্নর সারা হাকাবি স্যান্ডার্স, যিনি একসময় ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারি ছিলেন, তাঁর রাজ্যের টর্নেডো-ত্রাণ তহবিলের আবেদন প্রথমে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল।
পরে অবশ্য ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে তিনি সেই তহবিল পেতে সক্ষম হন। এমন পরিস্থিতিতে, ডেমোক্র্যাট দলীয় গভর্নর নিউসাম কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। ট্রাম্প এর আগেও ক্যালিফোর্নিয়াকে সাহায্য করতে দ্বিধা বোধ করেছেন।
এমনকী, FEMA-কে এড়িয়ে সরাসরি ত্রাণ বিতরণেরও অভিযোগ রয়েছে।
ট্রাম্প চান, সরকার কম করুক। বৈদেশিক সাহায্য কমানো হোক, বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং কর কমানো হোক, সেই সাথে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী দুর্বল করা হোক।
তবে তিনি প্রতিরক্ষা ব্যয়, শুল্ক বৃদ্ধি, সামরিক কুচকাওয়াজ এবং অভিবাসন বিষয়ক কঠোর নীতি সমর্থন করেন।
মোটকথা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরকার পরিচালনার ধরন অনেক ক্ষেত্রেই দ্বিমুখী। একদিকে ফেডারেল সরকারের ক্ষমতা কমানোর কথা বলেন, অন্যদিকে কিছু ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান। এই স্ববিরোধিতা তাঁর রাজনৈতিক কৌশলকে আরও জটিল করে তোলে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন।