যুক্তরাষ্ট্রের দরিদ্র ও খাদ্য সহায়তা খাতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাবিত বিশাল কাটছাঁট
যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান দলের আইনপ্রণেতারা দেশটির দুটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, মেডিকেড (Medicaid) ও খাদ্য সহায়তা প্রকল্প (Food Stamps)-এ প্রায় ১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার (১,০০,০০০ কোটি ডলার)-এর বেশি অর্থ কাটার প্রস্তাব করেছেন। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে, দেশটির কয়েক কোটি মানুষ স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য সহায়তার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
মেডিকেড মূলত দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে। খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি, যা সাধারণত ‘সাপ্লিমেন্টাল নিউট্রিশন অ্যাসিস্টেন্স প্রোগ্রাম’ (Supplemental Nutrition Assistance Program) বা সংক্ষেপে ‘স্ন্যাপ’ (SNAP) নামে পরিচিত, খাদ্য কেনার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এই দুটি কর্মসূচি যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
প্রস্তাবিত কাটছাঁটের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি এবং বয়স্ক নাগরিকরা। মেডিকেডের সুবিধাভোগীদের মধ্যে বর্তমানে ৭ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ এবং খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন প্রায় ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ।
রিপাবলিকানদের পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেডিকেড খাতে আগামী ১০ বছরে প্রায় ৭০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৭,০০,০০ কোটি ডলার) ফেডারেল সহায়তা কমানো হবে। এর ফলে, বিভিন্ন রাজ্যের সরকারগুলোকে এই কর্মসূচির ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হবে। রাজ্যগুলো হয় সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমাতে বাধ্য হবে, অথবা স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য বরাদ্দ কমাতে পারে। এমনকি শিক্ষা ও অবকাঠামোর মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতেও অর্থ বরাদ্দ কমানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রস্তাবিত আইনে মেডিকেডের সুবিধা পেতে হলে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। ১৯ থেকে ৬৪ বছর বয়সী সুবিধাভোগীদের প্রতি মাসে অন্তত ৮০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। তবে, যারা কাজ করতে অক্ষম, অসুস্থ বা প্রতিবন্ধী, তাদের জন্য কিছু ছাড়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই ধরনের শর্ত যুক্ত হওয়ায় অনেক যোগ্য ব্যক্তিও হয়তো তাদের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন, কারণ তাদের জন্য নিয়মকানুন অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
খাদ্য সহায়তা কর্মসূচিতেও কাটছাঁট প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে, ১৮ থেকে ৫৪ বছর বয়সী কর্মক্ষম ব্যক্তিরা, যাদের কোনো সন্তান নেই, তারা সাধারণত ৩৬ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩ মাস এই সুবিধা পেতে পারেন। নতুন আইনে, ৫৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের এবং ৭ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের অভিভাবকদেরও এই শর্তের আওতায় আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটির অর্থনীতিতে একটি প্রভাব পড়তে পারে। খাদ্য সহায়তা কর্মসূচির অর্থ স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রবাহিত হয়, যা ব্যবসা-বাণিজ্য এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এই সহায়তা কমালে স্থানীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন নজিরবিহীন কাটছাঁটের ফলে রাজ্য, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী এবং সুবিধাভোগী—সবার জন্যই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি পরিবর্তনের ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি বিশ্ব বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে এবং আন্তর্জাতিক সহায়তা কর্মসূচিতেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন