সমুদ্রে প্লাস্টিক দূষণ: অস্ট্রেলিয়ার পাখিগুলোতে ভয়ঙ্কর চিত্র, বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা। বিশ্বজুড়ে পরিবেশ দূষণের ভয়াবহতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যার প্রত্যক্ষ শিকার হচ্ছে বন্যপ্রাণী।
সম্প্রতি, অস্ট্রেলিয়ার লর্ড হাও দ্বীপের পাখিদের শরীরে প্লাস্টিকের ভয়াবহ উপস্থিতি সেই দূষণের এক ভয়ানক চিত্র তুলে ধরেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই দ্বীপের সামুদ্রিক পাখিদের পেটে এতটাই প্লাস্টিক জমেছে যে, তাদের শরীরে হাত দিলেই কচকচ শব্দ হয়।
এই ঘটনা শুধু অস্ট্রেলিয়ার জন্য নয়, বরং বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্যও একটি বড় সতর্কবার্তা। লর্ড হাও দ্বীপ, যা অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, সেখানে বসবাসকারী “সাদা পা ওয়ালা” নামের এক প্রজাতির পাখি, যাদের খাদ্যাভ্যাস মূলত সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী।
কিন্তু বর্তমানে তাদের পেটে খাবার বদলে জমা হচ্ছে প্লাস্টিক। গবেষণা বলছে, একটি পাখির পেটে সর্বোচ্চ ৭৭৮টি প্লাস্টিকের টুকরো পাওয়া গেছে, যা সত্যিই উদ্বেগজনক। এর আগে, সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছিল ৪০৩টি টুকরো।
বিজ্ঞানীরা এই ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে নেমেছেন। তাদের ধারণা, পাখির বাচ্চাদের বাবা-মায়েরা খাবারের বদলে ভুল করে প্লাস্টিক খাইয়ে দিচ্ছে। এছাড়া, সমুদ্রে ভেসে আসা প্লাস্টিকের গায়ে শৈবাল জন্মালে তা পাখির কাছে খাবারের মতো মনে হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, পাখিদের শরীরে প্লাস্টিক জমে থাকার কারণে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হচ্ছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। অনেক পাখির কিডনি ও হৃদপিণ্ডে ক্ষত সৃষ্টি হতেও দেখা গেছে।
সমুদ্রের পাখিগুলো পরিবেশের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয়। গত ৫০ বছরে এদের সংখ্যা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। এর প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত মাছ ধরা, জলবায়ু পরিবর্তন, এবং প্লাস্টিক দূষণ।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্লাস্টিক সহজে ভাঙ্গে না, তাই এটি দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশে মিশে থাকে এবং জলজ প্রাণীদের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করে।
এই ঘটনা বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। আমাদের দেশেও সমুদ্র এবং নদ-নদীগুলোতে প্লাস্টিকের দূষণ একটি বড় সমস্যা। বিশেষ করে, পলিথিন, প্লাস্টিকের বোতল, এবং অন্যান্য একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রী পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
এগুলো একদিকে যেমন নদীর মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর জীবনহানি ঘটায়, তেমনিভাবে মানুষের স্বাস্থ্যকেও ঝুঁকির মুখে ফেলে। সরকারের পাশাপাশি আমাদের প্রত্যেক নাগরিকেরও এই বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, পুনরায় ব্যবহারযোগ্য ব্যাগ ও পাত্র ব্যবহার করা, এবং প্লাস্টিক বর্জ্য সঠিক উপায়ে ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আমরা আমাদের পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি। আসুন, আমরা সবাই মিলে প্লাস্টিক দূষণমুক্ত একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন