একটি মারাত্মক দাবদাহ এবং একজন নারীর মৃত্যুর ঘটনায় জীবাশ্ম জ্বালানি প্রস্তুতকারক সাতটি বৃহৎ কোম্পানির বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলাটি দায়ের হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে।
মামলাটিতে অভিযোগ করা হয়েছে, কোম্পানিগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে জানতো, কিন্তু সে বিষয়ে জনসাধারণকে সতর্ক করেনি।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ২৮শে জুন ওয়াশিংটন রাজ্যে তীব্র তাপপ্রবাহ হয়। ওইদিন তাপমাত্রা ছিল ৪২.২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট), যা রাজ্যটিতে আগে কখনো রেকর্ড করা হয়নি।
এই দাবদাহের শিকার হয়ে মারা যান ৬৫ বছর বয়সী জুলি আনা লিওন। জানা গেছে, ঘটনার দিন লিওন তার গাড়ির এসি (AC) কাজ না করায়, গাড়ির জানালা খুলে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিচ্ছিলেন।
এক পর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং গাড়িতেই অচেতন হয়ে যান। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।
মামলায় অভিযুক্ত কোম্পানিগুলো হলো: এক্সন মোবিল, শেভরন, শেল, বিপি, কনোকোফিলিপস, ফিলিপস ৬৬ এবং বিপি’র সহযোগী অলিম্পিক পাইপলাইন কোম্পানি।
আদালতে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়েছে, কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য ব্যবহারের ফলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে, সে বিষয়ে অবগত ছিল। তারা জানত, জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে, যা ভবিষ্যতে আরও মারাত্মক রূপ নেবে।
কিন্তু তারা বিষয়টি গোপন রেখেছে এবং জনসাধারণকে কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি।
মামলার প্রতিক্রিয়ায় শেভরন কর্পোরেশনের আইনজীবী থিওডোর বাউট্রাস জুনিয়র বলেন, “ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডিকে পুঁজি করে জলবায়ু সংক্রান্ত মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এর কোনো আইনগত ভিত্তি নেই।
অন্য কোম্পানিগুলো এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
জলবায়ু বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের কার্যকলাপের কারণে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের তাপপ্রবাহ আরও বাড়ছে। তাদের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে না পারলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে।
এই ধরনের মামলাগুলো বিশ্বে পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে একটি নতুন দিক উন্মোচন করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজন ক্ষতিপূরণের দাবিতে কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় এবং তীব্র গরমের কারণে জীবন ও জীবিকার ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
এই মামলার রায় ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস