আফ্রিকার দেশ তানজানিয়াতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর এক উগান্ডান মানবাধিকার কর্মীকে সীমান্তের কাছে ফেলে আসার অভিযোগ উঠেছে। ওই নারীকে নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়েছে বলে জানা গেছে। শুক্রবার একটি মানবাধিকার সংস্থা এই তথ্য জানিয়েছে।
আগতর আতুহায়ার নামের ওই মানবাধিকার কর্মী তানজানিয়ার বিরোধী দলের এক নেতার প্রতি সমর্থন জানাতে সেখানে গিয়েছিলেন। জানা যায়, তিনি কেনিয়ার একজন দুর্নীতি বিরোধী কর্মীর সঙ্গে তানজানিয়ায় যান। তারা দুজনেই বিরোধী নেতা তান্ডু লিসুর একটি মামলার শুনানিতে অংশ নিয়েছিলেন।
সোমবার শুনানির পরেই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
উগান্ডার মানবাধিকার সংস্থা অ্যাগোরা ডিসকোর্স এক বিবৃতিতে জানায়, আতুহায়ারকে তানজানিয়ার কর্তৃপক্ষ সীমান্তের কাছে ‘ফেলে আসে’। তাদের মতে, ওই নারীর শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন ছিল।
একই সময়ে গ্রেপ্তার হওয়া কেনিয়ার মানবাধিকার কর্মী বনিফাস মাওয়াঙ্গিকেও একই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, তানজানিয়ার পুলিশ প্রথমে জানিয়েছিল, তাদের বিমানে করে ফেরত পাঠানো হবে। কিন্তু পরে মাওয়াংগিকে কেনিয়া সীমান্তের কাছে তানজানিয়ার একটি রাস্তার পাশে পাওয়া যায়।
অ্যাগোরা ডিসকোর্স শুক্রবার জানায়, আতুহায়ারকে খুঁজে পাওয়া গেছে। তবে তাদের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিম স্পায়ার সেন্টঙ্গো এএফপি সংবাদ সংস্থাকে নিশ্চিত করেছেন, নির্যাতনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
বর্তমানে তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানের বিরুদ্ধে কর্তৃত্ববাদী শাসনের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
লিসুর মামলার শুনানিতে অংশ নিতে যাওয়া কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, তানজানিয়া, কেনিয়া এবং উগান্ডা—এই তিনটি দেশ ‘গণতান্ত্রিক রীতিনীতি ধ্বংসের’ ষড়যন্ত্র করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন অক্টোবরে পুনরায় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট হাসান। এর আগে এমন গ্রেপ্তারগুলো তার মানবাধিকার রেকর্ডের ওপর প্রভাব ফেলছে।
যদিও তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তার সরকার মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে তিনি সতর্ক করে দিয়েছিলেন, লিসুর শুনানিতে অংশ নিতে আসা বিদেশি কর্মীদের কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না।
কেনিয়ার বেশ কয়েকজন কর্মী, যাদের মধ্যে দেশটির সাবেক একজন মন্ত্রীও ছিলেন, তারা লিসুর মামলার শুনানিতে যোগ দিতে তানজানিয়ায় প্রবেশ করতে পারেননি।
কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবিতে ফিরে মাওয়াঙ্গি জানান, তিনি এবং আতুহায়ারকে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে পশুর থেকেও খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে।
আমাদের হাত-পা বেঁধে, চোখ বেঁধে, গুরুতর নির্যাতন করা হয়েছে।’
কেনিয়ার আন্তর্জাতিক আইন কমিশন এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তানজানিয়া সরকার তাদের দেশের নাগরিক এবং অন্যান্য পূর্ব আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় থেকে বাঁচতে জাতীয় সার্বভৌমত্বের অজুহাত দিতে পারে না।’
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা