গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের (ডিআরসি) পূর্বাঞ্চলে চলমান সংঘাত আবারও আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি, এম২৩ গোষ্ঠীর দ্রুত গতিতে গোমা এবং বুকাভুর মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখলের পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলো নতুন করে মধ্যস্থতার প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে এসেছে।
কঙ্গোর পূর্বাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য, সংঘাতের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করা জরুরি।
এই অঞ্চলের খনিজ সম্পদ, বিশেষ করে বিরল মৃত্তিকা ধাতু (rare earth minerals), আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং স্থানীয় বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতা তৈরি করেছে, যা অস্থিরতা বাড়াচ্ছে। কঙ্গোর কেন্দ্রীয় সরকারের দুর্বল শাসনব্যবস্থা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর বিস্তার ঘটাতে সহায়ক হয়েছে।
এছাড়া, ১৯৯৪ সালের রুয়ান্ডা গণহত্যার পর হুতু শরণার্থীদের আগমন এবং তাদের দ্বারা গঠিত মিলিশিয়াদের কারণে জাতিগত উত্তেজনা বেড়ে এই সংকটকে আরও গভীর করেছে।
অতীতে ডিআরসিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা চালানো হলেও, সেগুলো টেকসই শান্তি আনতে ব্যর্থ হয়েছে।
প্রিটোরিয়া চুক্তি থেকে শুরু করে ২০০৯ সালের শান্তি চুক্তি পর্যন্ত—এসব উদ্যোগ দুর্বল কাঠামো এবং বাস্তবায়নের দুর্বলতার কারণে ব্যর্থ হয়। উদাহরণস্বরূপ, চুক্তিগুলোতে কার্যকর নজরদারি ব্যবস্থার অভাব ছিল।
অনেক ক্ষেত্রে, চুক্তিগুলো ছিল ঐচ্ছিক এবং বাস্তবায়নে নির্ভরযোগ্য কাঠামোর অভাব ছিল।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দুর্বল সমর্থন এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো প্রায়ই চুক্তি লঙ্ঘন করেছে, যা সহিংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছে।
শান্তি প্রক্রিয়াগুলোতে সমাজের বৃহত্তর অংশ, যেমন—নারী, সুশীল সমাজ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ ছিল খুবই সীমিত।
ফলে, স্থানীয় জনগণের আস্থা অর্জন করা যায়নি। এছাড়াও, ভূমি বিরোধ, জাতিগত বৈষম্য, সুশাসনের অভাব এবং প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ—সংঘাতের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় আগের প্রচেষ্টাগুলো ফলপ্রসূ হয়নি।
নতুন করে কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা এই সংকট সমাধানে একটি সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
তবে, অতীতের ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পদ্ধতিতে কাজ করতে হবে। এই লক্ষ্যে, তিনটি প্রধান বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে:
প্রথমত, আলোচনায় সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে সরকার এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে হওয়া আলোচনায় সুশীল সমাজ, নারী এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব ছিল না।
একটি কার্যকর শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য সমাজের সকল স্তরের মানুষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, সংঘাতের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে। ভূমি বিরোধ, জাতিগত বিভাজন, সুশাসনের অভাব এবং প্রাক্তন যোদ্ধাদের সমাজে পুনর্বাসন—এসব বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনতে হবে।
তৃতীয়ত, চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য শক্তিশালী কাঠামো তৈরি করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চুক্তির শর্তাবলী মেনে চলতে এবং লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে।
যদি এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, তাহলে ডিআরসিতে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি, পূর্ব আফ্রিকান সম্প্রদায় (ইএসি) এবং দক্ষিণ আফ্রিকান উন্নয়ন সম্প্রদায়ের (এসএ ডিসি) অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রচেষ্টাই পারে এই অঞ্চলের মানুষের আশা পূরণ করতে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা