পাকিস্তানের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের লক্ষ্যে চীন-আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রতি বেইজিংয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় চার বছর পর ইসলামাবাদ ও কাবুলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে এই বৈঠকে।
চীনের মধ্যস্থতায় অনুষ্ঠিত এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে তিনটি দেশই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রদূত নিয়োগের বিষয়ে নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছে। চীন এই পদক্ষেপে স্বাগত জানিয়েছে এবং আফগানিস্তান-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।
বৈঠকে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) নিয়ে আলোচনা। প্রায় ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের এই মেগা প্রকল্পের কাজ এখন আফগানিস্তানেও সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এই পদক্ষেপের ফলে আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্য এবং সংযোগ আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈঠকের আলোচনার কেন্দ্রে ছিল আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি। বিশেষ করে, আফগান ভূমি থেকে সক্রিয় তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান (টিটিপি)-এর সন্ত্রাসবাদী কার্যক্রম নিয়ে পাকিস্তানের উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
ইসলামাবাদ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে, টিটিপি সদস্যরা আফগানিস্তানে আশ্রয় নেয় এবং সেখান থেকে তারা পাকিস্তানে হামলা চালায়। অন্যদিকে, টিটিপি-কে নির্মূল করতে কাবুল সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে পাকিস্তান।
আফগানিস্তানে তালেবান ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক বেশ কয়েকবার খারাপ হয়েছে। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে যে, টিটিপি-কে মদদ দিচ্ছে তালেবান সরকার।
যদিও তালেবান এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
অন্যদিকে, ভারত ও আফগানিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে, যা ইসলামাবাদের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সম্প্রতি, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মধ্যে ফোনালাপ হয়েছে, যেখানে কাশ্মীর ইস্যুতে আলোচনা হয়।
এছাড়া, ভারতীয় গণমাধ্যমে তালেবানের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ভারত সফরের খবরও প্রকাশিত হয়েছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য হলো, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ায় নতুন ভূ-রাজনৈতিক মেরুকরণের প্রেক্ষাপটে তিনটি দেশের মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি করা। চীন এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চায়।
এই অঞ্চলে চীনের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও এই বৈঠকটি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে এই অঞ্চলের দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এটি বাণিজ্য, সংযোগ এবং উন্নয়নের পথ সুগম করবে, যা সকলের জন্য লাভজনক হবে।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা।