ডেনমার্ক ইউরোপের মধ্যে সবার আগে তাদের অবসর গ্রহণের বয়স ৭০ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সম্প্রতি দেশটির আইনপ্রণেতারা এই সংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন করেছেন, যেখানে বিলটির পক্ষে ভোট পড়েছে ৮১টি এবং বিপক্ষে ছিল ২১টি ভোট। নতুন এই আইন কার্যকর হবে তাদের জন্য, যারা ৩১শে ডিসেম্বর, ১৯৭০ এর পরে জন্মেছেন।
বর্তমানে ডেনমার্কে মানুষের গড় অবসর গ্রহণের বয়স ৬৭ বছর, তবে ১৯৬৭ সালের ১লা জানুয়ারি বা তার পরে জন্ম নেওয়া মানুষের ক্ষেত্রে এটি ৬৯ বছর পর্যন্ত হতে পারে।
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দেশটির কর্মসংস্থান মন্ত্রী আনে হালসবো-ইয়ার্গেনসেন এক বিবৃতিতে জানান, “আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ভালো জীবনযাত্রার মান নিশ্চিত করতে চাই, আর সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।”
তবে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে বিরোধী দলগুলো।
তাদের মতে, অবসর গ্রহণের বয়স এত বেশি করা “অযৌক্তিক”।
বিশেষ করে, শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের জন্য এত দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করা কঠিন হবে। রেড-গ্রিন অ্যালায়েন্স পার্টির সংসদ সদস্য পেলে ড্রাগস্টেড এক ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, “এটা বোধগম্য নয়, এর কোনো ব্যাখ্যা নেই এবং এটাকে সমর্থন করা যায় না।”
অন্যদিকে, ডেনমার্কের বিভিন্ন সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞ এই সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন।
তাদের মতে, বর্তমানে অনেক ডেনিশ নাগরিক অবসর গ্রহণের বয়স পেরিয়ে গেলেও কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ড্যানিশ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশন ফর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিজ অ্যান্ড পেনশন ফান্ডস (F&P)-এর মতে, ভালো অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, নমনীয় কর্মপরিবেশ এবং ভালো আর্থিক সুযোগ সুবিধার কারণে অনেকে বেশি দিন কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছেন।
F&P আরও জানিয়েছে, বর্তমানে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ অবসর গ্রহণের বয়স পার হওয়ার পরেও কাজ করছেন।
জান ভি হ্যানসেন, যিনি F&P-এর পেনশন বিভাগের পরিচালক, বলেছেন, “২০৪০ সাল নাগাদ অবসর গ্রহণের বয়স ৭০ বছরে পৌঁছানো অনেক ডেনিশ নাগরিকের কাছে কঠিন মনে হতে পারে।
তবে, পরিসংখ্যান দেখাচ্ছে যে, কর্মক্ষেত্রে বেশি দিন থাকার প্রবণতা বাড়ছে।” তিনি আরও যোগ করেন, “সুখবর হলো, অনেক ডেনিশ নাগরিকের স্বাস্থ্য ভালো আছে এবং তারা কাজ চালিয়ে যেতেও আগ্রহী।”
ডেনমার্ক প্রথম ইউরোপীয় দেশ, যারা অবসর গ্রহণের বয়স ৬০-এর উপরে নির্ধারণ করেছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটি বিশ্বের এমন কয়েকটি দেশের মধ্যে অন্যতম হবে, যেখানে অবসর গ্রহণের বয়স বেশি।
উদাহরণস্বরূপ, লিবিয়ার সঙ্গে ডেনমার্কের এই বয়স সমান।
অবশ্য, অন্যান্য দেশও তাদের অবসর গ্রহণের বয়স বাড়ানোর কথা ভাবছে।
উদাহরণস্বরূপ, ফ্রান্সে অবসর গ্রহণের বয়স বাড়ানোর প্রতিবাদে ২০২৩ সালের মার্চে ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল।
চীন সরকারও পুরুষের অবসর গ্রহণের বয়স ৬০ থেকে ৬৩ এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে তাদের পেশা অনুযায়ী ৫০ ও ৫৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ ও ৫৮ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
যুক্তরাজ্যেও ২০২৬ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে অবসর গ্রহণের বয়স ৬৭-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা এই বিষয়টা বিবেচনা করি, তাহলে দেখা যায়, এখানে সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই একটি নির্দিষ্ট বয়সে মানুষ অবসর গ্রহণ করে।
তবে, উন্নত দেশগুলোতে মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যখাতে উন্নতির কারণে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা বাড়ছে।
ডেনমার্কের এই সিদ্ধান্ত সম্ভবত উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে বয়স্ক মানুষের জীবনযাত্রার মান ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার একটি প্রয়াস।
তথ্য সূত্র: সিএনএন