ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মীর হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্ব নিলেন জেনিন পিরো।
ওয়াশিংটন ডিসিতে ইসরায়েলি দূতাবাসের দুইজন কর্মীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব নিয়েছেন সদ্য নিযুক্ত ফেডারেল প্রসিকিউটর জেনিন পিরো। এই ঘটনার পর কিভাবে তিনি পরিস্থিতি সামাল দেন, সেদিকে তাকিয়ে ছিল সবাই। কারণ, এর আগে তিনি পরিচিত ছিলেন ফক্স নিউজের উপস্থাপক হিসেবে।
তবে এবার তিনি সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে প্রকাশ্যে আসেন, যেখানে তার প্রধান কাজ ছিল এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করা।
এই ঘটনার দ্রুত তদন্তের পদক্ষেপ নেওয়ায় বিচার বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন পিরো। তার অধীনে কাজ করা আইনজীবীরাও এই পদক্ষেপে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন।
তবে জেনিন পিরো’র এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম কারণ ছিলেন তার পূর্বসূরি এড মার্টিনের থেকে তার ভিন্নতা। মার্টিন প্রায়ই তার কর্মীদের ইমেইল করতেন এবং ডেমোক্রেটিক কংগ্রেস সদস্য ও উদারপন্থী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে তদন্তের হুমকি দিতেন, যা অনেকের কাছেই ছিল অপ্রত্যাশিত।
তবে পিরো’র ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেও মার্টিনের মতো বিতর্কিত পথে হাঁটার সম্ভাবনা কম। বিচার বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারাও মনে করেন, মার্টিনের কার্যকলাপ মাঝে মাঝে সমস্যা তৈরি করত।
জেনিন পিরোর কাজের ধরনের এই পরিবর্তন বিচার বিভাগের সদর দফতর এবং তার অধীনে কাজ করা আইনজীবীদের জন্য স্বস্তিদায়ক হয়েছে। তাদের অনেকেই মার্টিনের অস্থির কর্মজীবনের কারণে ক্লান্ত ছিলেন।
ঘটনার তদন্তের শুরুতেই পিরোর তৎপরতা সকলের নজর কাড়ে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায়, তিনি এবং অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি ক্যাপিটাল ইহুদি জাদুঘরে যান, যেখানে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। সেখানে তিনি কোনো প্রকার প্রচার ছাড়াই নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তার এই পদক্ষেপ ইউএস অ্যাটর্নির অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে বেশ প্রশংসিত হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউসার, যিনি অতীতে শহরের অপরাধ নিয়ে রিপাবলিকানদের সমালোচনার শিকার হয়েছিলেন, এই যৌথ তদন্তের সুচারু ব্যবস্থাপনায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। পিরো, বন্ডি এবং বাউসার এই কঠিন পরিস্থিতিতে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করছেন।
এই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে পিরো বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, একটি তরুণ দম্পতি, যারা তাদের জীবন শুরু করতে যাচ্ছিল, তাদের মরদেহ একটি বিদেশি শহরে রাতের অন্ধকারে পাওয়া গেছে। আমি জানি, এই ধরনের ঘটনার গভীর প্রভাব রয়েছে।
এই ঘটনাগুলো পুরনো ক্ষতকে আবার জাগিয়ে তোলে, যা অতীতে ঘটে যাওয়া এমন কিছু ঘটনার কথা মনে করিয়ে দেয় যা আমরা কখনোই ভুলতে পারি না।”
ডিসি ইউএস অ্যাটর্নি অফিসের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, “বিচারক পিরোর অপরাধ দমনের তিন দশকের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনি সব সময়ই তার দক্ষতা কাজে লাগিয়েছেন।
তিনি তার কর্মীদের কাছ থেকেও একই রকম মান বজায় রাখতে বলেন। বর্তমানে, তার প্রধান কাজ হল ডিসিতে আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
এই মামলার ক্ষেত্রে, আদালতে সাক্ষ্য-প্রমাণগুলো বিশ্লেষণের ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, কোনো রাজনৈতিক আলোচনায় নয়।”
তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পিরোসহ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা সন্দেহভাজন এলিয়াস রড্রিগেজের বিরুদ্ধে ঘৃণা অপরাধ বা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনার চেষ্টা করছেন।
যদি এই মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের আবেদন করা হয়, তবে তা পিরো এবং ইউএস অ্যাটর্নি অফিসের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ, এই ধরনের মামলা সাধারণত উদারপন্থী শহরগুলোতে দীর্ঘ সময় ধরে চলে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন