যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ বোয়িং-এর সাথে একটি চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার ফলে বিমান প্রস্তুতকারক সংস্থাটিকে ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের দুর্ঘটনার জন্য ফৌজদারি অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে। এই চুক্তির ফলে বোয়িংকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১১০ কোটি ডলারেরও বেশি পরিশোধ করতে হবে।
২০১৮ ও ২০১৯ সালে ইন্দোনেশিয়া ও ইথিওপিয়ায় দুটি ৭৩৭ ম্যাক্স বিমান দুর্ঘটনায় মোট ৩4৬ জন নিহত হন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় নথিপত্র অনুযায়ী, বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA)-কে ৭৩৭ ম্যাক্স বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছিল। বিশেষ করে, বিমানের একটি সফটওয়্যার সিস্টেম, যা ‘এমসিএএস’ নামে পরিচিত, সেটির কারিগরি দিকটি গোপন করা হয়েছিল।
এই এমসিএএস সফটওয়্যারটি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চুক্তি অনুযায়ী, বোয়িং ক্ষতিপূরণ হিসেবে নিহতদের পরিবারকে অতিরিক্ত ৪৪ কোটি ৫০ লক্ষ ডলার দেবে। এর বিনিময়ে, বিচার বিভাগ বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেবে, যা কোম্পানিটিকে ফৌজদারি অপরাধের দায় থেকে বাঁচাবে।
বোয়িং যদি দোষী সাব্যস্ত হতো, তবে তাদের ফেডারেল সরকারের সাথে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারত।
তবে, এই চুক্তির বিষয়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক পরিবার একটি জনসমক্ষে বিচার এবং বোয়িং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
তাঁদের মতে, এই ধরনের সমঝোতা ‘নজিরবিহীন’ এবং ‘ভুল’। ভুক্তভোগী পরিবারের আইনজীবী পল ক্যাসেল এই বিষয়ে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক কর্পোরেট অপরাধের জন্য এই ধরনের নন-প্রসিকিউশন ডিল নিঃসন্দেহে ভুল।”
অন্যদিকে, নিহতদের পরিবারের কেউ কেউ এই চুক্তির মাধ্যমে পাওয়া ক্ষতিপূরণকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁদের মতে, এর মাধ্যমে অন্তত কিছুটা হলেও তাঁদের দুঃখ লাঘব হবে।
বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা FAA-কে এমসিএএস সফটওয়্যার এবং পাইলটদের প্রশিক্ষণ সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়েছিল। দুর্ঘটনার পর, এই মডেলের বিমানগুলি সারা বিশ্বে গ্রাউন্ডেড করা হয়েছিল।
পরে বোয়িং এমসিএএস সফটওয়্যারটিকে উন্নত করে এবং ত্রুটিপূর্ণ সেন্সর ব্যবহারের পরিবর্তে দুটি সেন্সর ব্যবহার করে ডিজাইন পরিবর্তন করে।
আগে, ২০২১ সালে বিচার বিভাগ বোয়িংয়ের বিরুদ্ধে FAA-কে প্রতারিত করার অভিযোগ এনেছিল। তখন বোয়িংকে ২৫০ কোটি ডলার জরিমানা এবং অ্যান্টি-ফ্রড আইন মেনে চলার শর্তে অভিযুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
তবে, পরে বোয়িং সেই শর্ত ভঙ্গ করে। এর ফলস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত এই ডিল প্রত্যাখ্যান করে।
এই নতুন চুক্তিতে বোয়িংকে একজন “স্বাধীন কমপ্লায়েন্স কনসালট্যান্ট” নিয়োগ করতে হবে, যিনি ভবিষ্যতে উন্নতির জন্য সুপারিশ করবেন এবং সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ করবেন।
বিমান দুর্ঘটনার এই ঘটনা বিশ্বজুড়ে বিমান চলাচলের নিরাপত্তা মান নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও, বিমান নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও জোরদার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস