যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা: হারিকেন মৌসুমের আগে উদ্বেগে নিরাপত্তা পরিচালক
ফ্লোরিডার উপকূলবর্তী দ্বীপপুঞ্জ, যা “ফ্লোরিডা কিস” নামে পরিচিত, ঘূর্ণিঝড়ের ঝুঁকির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অরক্ষিত। জিম্বি বাফেটের গানের জগৎ থেকে শুরু করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে পরিচিত এই দ্বীপগুলি আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে অবস্থিত। মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ১২০ মাইল দূরে অবস্থিত এই দ্বীপগুলোতে প্রায় ৮০,০০০ মানুষের বসবাস। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা একদিকে যেমন প্রকৃতির কাছাকাছি, তেমনই তাদের মধ্যে রয়েছে শিল্প ও আনন্দের ছোঁয়া।
আসন্ন হারিকেন মৌসুমের আগে এখানকার জরুরি ব্যবস্থাপনা পরিচালক শ্যানন উইনারের ঘুম উড়ে গেছে। মনরো কাউন্টির এই কর্মকর্তার প্রধান চিন্তা হলো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে এখানকার বাসিন্দাদের কিভাবে নিরাপদে রাখা যায়। আটলান্টিক হারিকেন মৌসুম শুরু হয় ১লা জুন থেকে। এই অঞ্চলের সুরক্ষার জন্য নতুন কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি অত্যাধুনিক জরুরি অপারেশন সেন্টার এবং একটি নতুন সমুদ্র-জল শোধন কেন্দ্র। এছাড়াও, জাতীয় সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসন (NOAA) -এর সহায়তায় হারিকেন-সন্ধানী বিমানের মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে এখানকার প্রস্তুতিগুলো নেওয়া হয়।
২০১৭ সালে আঘাত হানা ‘হারিকেন ইরমা’র কথা এখনো এখানকার মানুষের মনে গেঁথে আছে।Category 4 মাত্রার এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ১,১৮০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং ৩,০০০ এর বেশি বাড়ির মারাত্মক ক্ষতি হয়।
শ্যানন উইনার সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (AP) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আসন্ন হারিকেন মৌসুম নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান। তিনি বলেন, “পুরো দ্বীপপুঞ্জটি পানির দ্বারা পরিবেষ্টিত। এখানে স্থলভাগের চেয়ে জলের পরিমাণ বেশি। দুইটি বিশাল জলরাশির মাঝে অবস্থিত হওয়ায় আমরা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছি। আমরা প্রায়ই ঝড়গুলো প্রথমে অনুভব করি, কখনো কখনো তাদের উৎপত্তির সময়েই। আটলান্টিক মহাসাগর এবং ক্যারিবিয়ান সাগরে তৈরি হওয়া ঝড়গুলো আমাদের দিকেই ধেয়ে আসে। ফলে, মনরো কাউন্টিতে আমাদের প্রায়ই ঝড়ের মোকাবিলা করতে হয়।”
উইনার আরও জানান, NOAA-এর পূর্বাভাস এবং তাদের কর্মীদের উপর তিনি আস্থা রাখেন। তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় অফিসে কোনো কর্মী ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা নেই। হারিকেন মৌসুমের আগে এটি তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক।
২০১৭ সালের হারিকেন ইরমার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, “বিগত কয়েক দশকে এমন শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানেনি। মানুষজন মাঝে মাঝে অসচেতন হয়ে যায়। তাদের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা কমে যায়, প্রস্তুতিও দুর্বল হয়ে যায়। তবে ইরমার সময় আমরা পর্যাপ্ত সময় পেয়েছিলাম বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু যখন আমরা ফিরে এসে ধ্বংসযজ্ঞ দেখি, তখন নিজেদের অসহায় মনে হয়েছিল। দ্বীপ হওয়ায় এখানে ত্রাণ সরবরাহ করাও কঠিন ছিল।”
উইনার আরও যোগ করেন, সাধারণত এখানকার বাসিন্দারা কর্তৃপক্ষের পরামর্শ মেনে চলেন। তিনি সবসময় মানুষকে প্রস্তুত থাকার কথা মনে করিয়ে দেন। কারণ ফ্লোরিডা কিসের পুরোটাই ঝড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এখানকার মানুষের কাছে বাতাসের চেয়ে জলোচ্ছ্বাস বেশি উদ্বেগের কারণ। তিনি বলেন, “বাতাস থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিন, আর জল থেকে বাঁচতে দূরে যান।”
আসন্ন হারিকেন মৌসুম নিয়ে তার উদ্বেগের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে উইনার বলেন, “কী ওয়েস্ট একটি শক্তিশালী জনপদ, এখানকার মানুষের ইতিহাস অনেক পুরোনো। এখানে পুরনো স্থাপত্য এবং কাঠের তৈরি অনেক বাড়ি রয়েছে। যদি একটি শক্তিশালী ঝড় সরাসরি আঘাত হানে, তাহলে তা ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাবে।Category 4 বা 5 মাত্রার কোনো ঘূর্ণিঝড় কী ওয়েস্টে আঘাত হানলে আমি সবচেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন হই।”
এত ঝুঁকির পরেও কেন মানুষ এখানে থাকতে চায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “কারণ এটি সুন্দর একটি জায়গা। সত্যি বলতে, এটি একটি দ্বীপ স্বর্গ। এখানকার পরিবেশ, এখানকার জীববৈচিত্র্য আমাদের আকর্ষণ করে। এখানকার মানুষ পরিবেশ ও সমুদ্রকে ভালোবাসে। তাই এখানকার জীবন উপভোগ করার মতো। আমরা প্রস্তুত থাকি এবং আমাদের একটি পরিকল্পনা থাকে, যাতে প্রয়োজনে নিরাপদ স্থানে যেতে পারি। এরপর আমরা আবার ফিরে আসি এবং সবকিছু নতুন করে গুছিয়ে নেই।”
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস