তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠক, ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে।
সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক সংঘাতের কয়েক সপ্তাহ পরেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের মধ্যে ইস্তাম্বুলে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় নেতা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি এবং পরিবহন খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর বিষয়ে তারা আলোচনা করেন।
বৈঠকে এরদোগান শাহবাজ শরিফকে জানান, তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে শিক্ষা, গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রযুক্তিগত সহায়তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা উভয় দেশের স্বার্থের জন্য জরুরি। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, এই বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ দমনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই বৈঠকটি এমন একটি সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন ভারতের পক্ষ থেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের প্রতি অস্ত্র সরবরাহ করার অভিযোগ আনা হচ্ছে। কাশ্মীর সীমান্তে সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই অভিযোগ ওঠে। যদিও তুরস্ক সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহে, কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে এরদোগান পাকিস্তানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন। ভারত সরকার কাশ্মীরের ভারতীয় অংশে অবস্থিত কিছু স্থানে সামরিক অভিযান চালায়, যার প্রতিক্রিয়ায় তুরস্ক পাকিস্তানের পাশে দাঁড়ায়। ভারত সরকার জানায়, কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর সশস্ত্র হামলার প্রতিশোধ হিসেবে তারা এই অভিযান চালিয়েছে। এই হামলায় ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালী নাগরিক নিহত হয়েছিল। ভারত এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে পরোক্ষভাবে সমর্থন করার অভিযোগ করেছে, যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে।
এই পরিস্থিতিতে তুরস্ক দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে “পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ” হওয়ার ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে উভয় পক্ষকে উত্তেজনা কমাতে “সতর্কতা অবলম্বন” করার আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে তুরস্ক, কাশ্মীর হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের পাকিস্তানের অনুরোধকে সমর্থন করে।
উল্লেখ্য, ১০ই মে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। তুরস্ক ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। ফেব্রুয়ারিতে এরদোগান ইসলামাবাদ সফর করেন, যেখানে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করতে ২৪টি সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।
অন্যদিকে, তুরস্কের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি ঘটছে। এর প্রতিক্রিয়ায়, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছেন, “পারস্পরিক উদ্বেগের প্রতি সংবেদনশীলতার ভিত্তিতেই সম্পর্ক গড়ে ওঠে।” তিনি আরও বলেন, “আমরা আশা করি তুরস্ক সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধ করতে পাকিস্তানকে জোরালোভাবে চাপ দেবে এবং দশকের পর দশক ধরে আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য ও যাচাইযোগ্য পদক্ষেপ নেবে।”
এই ঘটনার জেরে, ভারতের বিভিন্ন মুদি দোকান ও অনলাইন ফ্যাশন রিটেইলাররা তুরস্ক থেকে আসা বিভিন্ন পণ্য, যেমন – চকলেট, কফি, জ্যাম, প্রসাধনী এবং পোশাক বর্জনের ঘোষণা করেছে। ফ্লিপকার্ট এবং মুকেশ আম্বানির মালিকানাধীন রিলায়েন্সের মতো ভারতীয় ফ্যাশন ওয়েবসাইটগুলো তাদের সাইট থেকে তুর্কি পোশাকের ব্র্যান্ড সরিয়ে দিয়েছে।
যদিও তুরস্ক থেকে ভারতের আমদানি করা পণ্যের মধ্যে খনিজ জ্বালানি এবং মূল্যবান ধাতু প্রধান। তবে, এই পরিস্থিতিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উপর কী প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। ভারতীয় ভ্রমণ সংস্থাগুলোও তুরস্কের ফ্লাইট, হোটেল এবং হলিডে প্যাকেজ বুকিং স্থগিত করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে তুর্কি পণ্য বর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি, তবে দেশটির বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রক ১৫ই মে তারিখে তুরস্কের একটি বিমানবন্দর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংস্থা সেলেবির নিরাপত্তা ছাড়পত্র বাতিল করেছে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা