কলম্বিয়ার আকাশে দেখা যাওয়া একটি রহস্যময় ধাতব গোলক নিয়ে চলছে বিজ্ঞানীদের গবেষণা। উড়ন্ত অবস্থায় বস্তুটিকে চিহ্নিত করার পর, সম্প্রতি বুগা শহর থেকে এটি উদ্ধার করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বস্তুটির গঠন এবং এর ভেতরের কিছু বৈশিষ্ট্য তাদের কৌতূহলী করে তুলেছে।

খবর অনুযায়ী, বস্তুটির গায়ে কোনো জোড়া বা সংযোগস্থল নেই, যা সাধারণত মানুষের তৈরি বস্তুতে দেখা যায়। এছাড়াও এর উপরিভাগে কিছু চিহ্নের উপস্থিতি গবেষকদের কাছে এক নতুন রহস্য সৃষ্টি করেছে।

গবেষক দলের প্রধান জোসে লুইস ভেলাজকুয়েজ জানিয়েছেন, তারা এক্স-রের মাধ্যমে বস্তুটির ভেতরের গঠন পরীক্ষা করেছেন। পরীক্ষায় গোলকটির তিনটি ধাতব স্তর এবং ভেতরে নয়টি ক্ষুদ্র গোলকের সন্ধান পাওয়া গেছে।

ভেলাজকুয়েজ আরও জানান, “এটি খুবই বিরল একটি বস্তু, আগে এমন কিছু দেখিনি।

তবে, সান দিয়েগো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা ও বায়োফিজিক্স বিভাগের সদস্য এবং ‘দ্য ইনস্টিটিউট ফর লাভ অ্যান্ড টাইম’ (TILT)-এর প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়া মসব্রিজ এই গোলকের উৎস সম্পর্কে সন্দিহান। তিনি মনে করেন, এটি সম্ভবত কোনো শিল্পকর্ম হতে পারে।

মসব্রিজ আরও যোগ করেন, কোনো বস্তুকে ‘অস্বাভাবিক’ বা ‘অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তু’ (UFO) বলার আগে গ্যালিলিও প্রকল্পের মতো আন্তর্জাতিক গবেষণা দলের মাধ্যমে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করা উচিত। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতিপদার্থবিদ অ্যাভি লোয়েব এই প্রকল্পের প্রতিষ্ঠাতা, যার মূল উদ্দেশ্য হল সম্ভাব্য ভিনগ্রহের শিল্পকর্মগুলো যাচাই ও বিশ্লেষণের জন্য বিজ্ঞানসম্মত গবেষণা পরিচালনা করা।

মসব্রিজের মতে, এমন ঘটনাগুলো সম্ভবত মহাবিশ্বের চেয়ে মানুষের বর্তমান অবস্থাকে বেশি প্রতিফলিত করে। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটা সময়ে প্রবেশ করছি যখন আমাদের ধারণা অনুযায়ী সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। যদি কোনো শিল্পী এমনটা করে থাকেন, তবে এর কারণ কী? সম্ভবত, এর কারণ হলো আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের আকাশ বা জলের গভীরে আসলে কী ঘটছে, তা আমরা জানি না। এমন কিছু ঘটছে যা আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বড়।”

যদিও মসব্রিজ কলম্বিয়ায় পাওয়া বস্তুটির বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তিনি সব ইউএফও বা অজ্ঞাত উড়ন্ত বস্তুর ঘটনাকে উড়িয়ে দিতে নারাজ। তিনি বলেন, “আমরা বহু বছর ধরে এই ধরনের ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করছি এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারও স্বীকার করেছে যে এমন কিছু বিষয় রয়েছে যা আমরা এখনো বুঝি না, তবে সেগুলোর তদন্ত চলছে।

মসব্রিজ জোর দিয়ে বলেন, সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে গ্যালিলিও প্রকল্পের মতো গবেষণা দলগুলোর সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। তাদের মূল লক্ষ্য হলো, আকাশে বা জলের নিচে যা ঘটছে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা তৈরি করা।

তিনি আরও বলেন, “উদাহরণস্বরূপ, কলম্বিয়ায় পাওয়া এই গোলকটি অন্য একটি দেশে পাওয়া গেছে। এমন পরিস্থিতিতে, এই ধরনের কোনো আগ্রহোদ্দীপক বস্তুর সঙ্গে কিভাবে মোকাবেলা করা যায়, সে বিষয়ে নিয়মকানুন তৈরি করা প্রয়োজন।

জুলিয়া মসব্রিজ মনে করেন, “অজানা জিনিসের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হলো ভয়। তবে ভয় আমাদের সুরক্ষিত রাখতে পারে না। আমাদের সুরক্ষিত রাখে, যা ঘটছে তা বোঝার এবং অনুসন্ধানের মানসিকতা, এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানানো।

তথ্য সূত্র: পিপল